সার্চ করুন

সোমবার, ৩০ মার্চ, ২০২০

রুদ্ধ-শ্বাসের ছায়াতলে


করোনা ভাইরাসের ওপর কবিতাটি রচিত হয়েছে।


ওই নীল দ্যুলকের কালো পাতায়
নামল এ-কী রুদ্র গজব,
ধরণীর বক্ষে চমকে বেড়ায়
যদিও শুনে লাগে আযব।

ওই বীষমাখা বাতায়ন আভায়
ব্যথিত কে ভেসে আসে,
রুদ্ধ নয়ন নির্মম মায়ায়
প্রকাণ্ড কণ্ঠে লুকিয়ে হাসে!

যার উষ্ণ হাতের অকরুন ছায়ায়
বিশ্ব মানব শিউরে ওঠে!
সুস্থ জীব নেতিয়ে পড়ে
মৃত্যু দুয়ারের শিকল টুটে।

আহা! আজ কেন তার কারণে
জগৎ এমন কথা বলে,
পড়ে কেন তার চরণে
রুদ্ধ-শ্বাসের ছায়াতলে।

আজ দিগন্তরে ছড়িয়েছে যেন
রক্ত শ্রোতের নীল ভাইরাস!
শোকে দিশাহীন পথিক কেন?
কাঁপে বুঝি দিবা-নিশি ত্রাস।

লকডাউন হয় ভুবন জুড়ে
মৃত্যু মিছিলে শোকের ঢেউ!
সহস্র লাশ অনলে পুড়ে
মানব শূন্য পথ-ঘাট;
ক্ষুধার্ত কুকুর ছাড়া নেই কেউ!

আজ বেদনায় ভরে দিগন্ত
ঘরছাড়া কেন শতাধীক শ্রমিক?
বিরহের বাদল নামে অফুরন্ত
ঝলসানো বেদনায় আবদ্ধ চারিদিক।

মাস্ক বিক্রেতা ফুলে ফেপে ঢোল!
কালোবাজারির কারখানা,
নেই গ্লাপ্স, নেই ভেন্টিলেটার;
শহর নগর হাসপাতালের কোল
হয় মৃত মানবের আস্থানা!

গাঢ় আঁধারে কে দাঁড়িয়ে থাকে?
তারই ভয়ে প্রজা গৃহবন্দি,
আতঙ্ক বুকে নিয়ে সময়ের ফাঁকে
ক্ষুধা নিবারণের করে ফন্দি।


রচনাকালঃ- ৩০/০৩/২০২০

সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৯

বিনিদ্র প্রহর


জানি,
অচিরে আমি চলে গেলে কেউ একটুও কাঁদবেনা!
শ্রাবণের অজস্র বারিধারা অশ্রু হয়ে
নয়ন থেকে ঢলে পড়বে প্রকৃতির কোলে,
তবু তার কান্নার সঙ্গে কারো কান্না এক হয়ে যাবেনা।
শুধু সযত্নে লালিত এলবমের ছবিগুলো বিবর্ণ হয়ে রবে
আর আমার প্রিয় খবরের কাগজ
গুলোতে জমবে বিস্তৃতির একরাশ ধূলো।
ঘরের চার দেয়ালের মাঝে জমে থাকবে
সহস্র বিরহের দহন মাখা স্মৃতি!
নিথর ঝুলেথাকা জানালার সবুজ পর্দা
উষ্ণ বাতাসে দোল খাবে
শহরের নিয়ন আলোর ভিড় মুছে ফেলতে চায়বে অস্তিত্ব;
কোন এক শেষ বিকেলের অলস মুহূর্তে
যখন বাজবে আমার সেই প্রিয় গানগুলো;
তখন কি কান্নায় কারো বুকটা কেঁপে উঠবে?
দুষ্টু বাবুইপাখির ঝাঁক আমাকে খুঁজে না পেয়ে
শূন্য আলয় ছেড়ে আনমনে চলে যাবে চির দিনের মতো।
এতদিন যে সাদা গোলাপের বৃক্ষকে বড় করেছিলাম
আমার স্পর্শের অভাবে ধীরে-ধীরে হয়ে পড়বে নিস্তেজ,,
নিস্তব্ধ রাতের আঁধারে জ্যোৎস্না সিওরে থমকে দাঁড়িয়ে থাকে
অবাক চিত্তে মেঘের আঁচল তলে  মুখ লুকোবে;
তবু পৃথিবীর নিষ্ঠুর মানুষগুলোর মধ্যে থেকে কেউ বলবেনা
কোথায় হারালো এই আরাফাত নামের ছেলেটা!


রচনাকালঃ- ১২/১০/২০১৯

শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যা


আজ নতুন করে তোমার কথা পড়ল মনে
বৃষ্টিভেজা সমীরে জাগল ব্যাথা, হৃদ কোণে!
তোমার স্মৃতি আজ নীল পলকে
ভেসে উঠল প্রান্তর দ্যুলকে,
ভোলা যে যায়না নিষ্পাপ মুখখানি হায়
রয়েছি আনমনে।
আশ্বিনের ভেজা বৃষ্টিতে তোমার সুর বাজে কানে।
আজ অস্থির ঝড়ের কাতরানিতে কেন জাগল ভয়
পাইনি খুঁজে আজও জ্বলেগো আগুন, নিবিড় ব্যাথায়!
মাতাল বায়ুর ঝাপটা লেগে
অতীতের কথা উঠল জেগে,
একলা পথের পথিক আমি
নাওনাগো টেনে।
তোমায় নিয়ে ভাসব অশ্বিন সন্ধ্যার ভেজা পবনে।


রচনাকালঃ- ২৮/০৯/২০১৯

বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

কলঙ্কিত সভ্যতা


কলি কালের এ-কী পরিহাস
পাপাচারের দুয়ার হয় উন্মুক্ত,
ধরণীর বুকে বাড়ে দানবের চাষ
ব্যাঙ সাপের দলে হয় যুক্ত।

তন্ত্র-মন্ত্রের নামে সিখে কূটনীতি
পরিধান করে গিরিধারী বস্ত্র,
ঢঙী বাবা ডেকে আনে ক্ষতি
প্রকাশ পাই লুকনো সেই অস্ত্র।

উর্ধ্বে কুন্তল মুখে কালো দাড়ি
খুলে দেয় লুণ্ঠিত আশ্রম,
ধন-সম্পদে পূর্ণ করে হাড়ি
নিজেকে ভাবে অপরাজয়ী বিক্রম।

উর্বর জমিনে বুনে শয়তানী বীজ
বিষাক্ত হয়ে ওঠে মাটি!
জন্ম নেয় অগণিত জারজ দ্বিজ
মানুষ হিসেবে নয়তো খাঁটি।

মানব সেবার নামে করে অপকর্ম
আশ্রমে জমে ওঠে রমণীর ভিড়,
গেরুয়া পরিধানকারী ভুলে যায় ধর্ম
শয্যায় মুখরিত হয় গোপন নীড়!

নেশার দ্রব্য দিয়ে করে অজ্ঞান
কামজে মেতে ওঠে ভন্ড পূজারী!
তবু যেন ভাঙেনা সভ্যতার ধ্যান
পুলকে নগ্ন দানব বলাতকারী!

বুদ্ধিহীন সভ্যতার অন্ধ বিশ্বাস
নিয়ে আসে এক মহা-প্রলয়,
শত-শত অঙ্গনার হয় সতীত্বনাশ
বদনামের ছোপে কলঙ্কিত আলয়।

সভ্যতাকে বিষ মুক্ত করতে
ছুড়তে হবে লক্ষ্যভেদকারী বাণ,
সুন্দর ধরা নিজ হাতে গড়তে
নেমে আসবেনা কভু ভগবান।


রচনাকালঃ- ২৬/০৯/২০১৯

শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯

শেষ ঠিকানার নিঃঝুম পথে


শেষ ঠিকানার নিঃঝুম পথে
দেখি জীর্ণ পাতা ঝরে পড়ে,
তুমি কেন হায় ময়ুরী সেজে
ছুটে এলে আবেগী ঝড়ে।

চারিদিকে মোর বিরহ এসে
ভাঙ্গা ইটের প্রাসাদ গড়ে,
বৃথায় কেন হায় প্রণয়ের স্বপ্ন
দেখলে তুমি নয়ন জুড়ে।

এলে আবেলায় মোর দুয়ারে
ফুলহীন সুকনো ডাল উঠছে নড়ে,
কি সওগাত দিয়ে টানব এ বুকে
নিভেছে আলো আঁধার মুড়ে।


রচনাকালঃ- ০২/০৮/২০১৯

শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৯

অশনি সংকেত


ঢলেপড়া রজনীর নিস্তব্ধতায়
জুলুমের দৃশ্য ভেসে ওঠে নয়নজলে!
বিস্তীর্ণ গগন ঢেকে ফেলে কালো মেঘ
শ্রাবণের বারিধারা খুঁজে ফিরে পুরোনো কাশবন,
দিশাহীন মন বিষাদের চাদর মুড়ি দিয়ে
অতৃপ্ত তৃষ্ণায় কাতরায় অদৃশ্য রাতের অন্ধকারে।

দিনের আলোয়,
সব স্বাভাবিক প্রতিচ্ছবি ধারণ করে।
সন্ধ্যা গড়িয়ে আঁধার নামে
অপরিস্কার জলে ভেসে ওঠে নীল শতদল,
গাঢ় এঁদোয় দেখা যায় না পথ
নীরব মৌনতায় বিষাক্ত বায়ু থমকে দাঁড়ায় অস্থির চিত্তে!
অনিষ্ঠের আহ্বানে নিজেকে হারাতে
কারা হেঁটে যায় নীরব গোরস্থানের পাশদিয়ে,
উত্তপ্ত জমিনের বুকে অসহায় বৃক্ষ
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিৎকার করে বলে ওঠে;
পিশাচের দেশে রক্তের খেলা! দুর্নীতির মেলা!
তার প্রাণফাটা রোদনে প্রদোষ সজ্জিত হয়
এক অতভূত অদৃশ্য গোপন রহস্যে।

অক্লান্ত মাছ তীরে মৃত্যুর দিনগুনে জোয়ারের অপেক্ষায়!
নাটকের রঙ্গমঞ্চে নব অভিনেতা ছোবল মারে,
সতর্কবাণীর সাইরেন বাজে চিন্তিত মস্তিস্কে
দূর থেকে ভেসে আসে আওয়াজ-
আগামীতে পৃথিবী সজ্জিত হবে দুর্ভিক্ষের উষ্ণ পবনে!
তবু আশার কিরণ এসে আঘাত করে হৃদে;
আবার মুহূর্তেই স্বপ্ন হয়ে মিশে যায় আঁখির পাতায়।

মেতে ওঠে নিশিথ নগ্ন হরিণীর বাজারে!
দিশাহীন নদী সুর ভুলে পথ খুঁজে,
বিবশ শশী সবকিছু দেখে নিথর দৃষ্টিতে
গোপন রহস্য দেয় ভয়ঙ্কর প্রলয়ের অশনি সংকেত।
ক্ষীণ সুরে বলে ওঠে;
আগামী প্রজন্ম, সাবধান! হুশিয়ার!
হয়তো একদিন দ্রোহের তুফান উঠবে যামিনীর বাগিচায়
সব তচনচ করে যাবে!
আঙিনায় পড়ে রইবে বাস্তবের কিছু নিদর্শন
হয়তো একদিন বিষাদী বাতাস বয়ে যাবে সুদূরে,
আসবে শ্রাবণ প্রখর বর্ষণের পথ ধরে
আবর্জনা ধুয়ে মুছে পুনরয় নব ধরণী গঠন করবে।


রচনাকালঃ- ০৫/০৭/২০১৯

সোমবার, ১০ জুন, ২০১৯

ডাইরির পাতা


কখনও ভাবিনি
তোমার সঙ্গে মাঝ পথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে,
হয়তো ভেবেছিলে আমি তোমায় চিনতে পারিনি
তুমি সেই রমণী যাকে প্রতি রাতে স্বপ্নে দেখি‌।
ভাবতেই পারিনি; সত্যি বলছি-
তুমি আমার কল্পনার থেকেও অনেক সুন্দর!

কি সুন্দর করে সেদিন বলেছিলে
আচ্ছা আপনি সেই কবি তাই না?
কেন বলেছিলে সেটা আমি জানতাম।
সেদিন বসে কফি খেতে-খেতে
ওই চোখে দেখেছি অতভূত মায়া!
যেন আমার সামনে ভাসছে একটি নিস্পাপ মুখ।
মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝেছিলাম;
তোমার চোখ অন্য কারো ছবি আঁকেনা
ওই মনের দুয়ারে যে কড়া নাড়ে সেটা হলাম আমি।

আজ চদ্দই ফেব্রয়ারি
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস;
হ্যাপি ভ্যালেনটাইন্স-ডে তরুণিমা;
আই মিস ইউ!

আমি হলাম সেই ঘুড়ি
যে উড়তে উড়তে বৃক্ষের ডালে আটকে যায়!
তাকে কেউ ছাড়ায় না; বৃষ্টিতে ভিজে;
রোদে পুড়ে তবু পাতার ফাঁকে আটকে থাকে।
তুমি কখনো মরুভূমির বুকে পথিক দেখেছ?
তৃষ্ণার তাড়নায় সে চারপাশে দেখে শুধু জল,
অবশেষে জলের কাছে গেলে আর কিছুই মিলেনা!

অনেক মিস করছিলে আমাকে তাই না?
থাকতে না পেরে ছুটে এসেছ আমার খোঁজে!
আমি জানতাম তুমি আসব;
হয়তো তখন আমি আর থাকব না!
না তুমি দেরি করোনি, আমার হাতেই সময় ছিলনা।
জানো এখন আফসোস হচ্ছে
কয়েকটা দিন যদি তোমার সাথে কাটাতে পারতাম!
আমি এমন বলছি বলে অবাক হচ্ছো?
সত্যি বলছি তোমাকে কখনো দূরে সরাতে চাইনি,
তুমি আমার হাজার রাতের স্বপ্ন!
কিন্তু কি করব বল; মায়া বাড়াতে চাইনি-যে!
হ্যাঁ তরুণিমা আমি সেই মানুষদের মধ্যে একজন
যে জানতো তার মৃত্যুর দিনক্ষণ!
আমার ক্যানসার ছিল
জানতাম আর বেশি দিন বাঁচব না,
এ কথা অনেকবার তোমায় চেয়েছি বলতে
কিন্তু বিশ্বাস কর কোথায় যেন আটকে যেতাম-
বারংবার ওই ঝুলে থাকা ঘুড়িটার মত।
হ্যাঁ তরুণিমা আজ ওই ঘুড়িটাকে কে যেন খুলে দিয়েছে!

আজ এই অসময়ে
অনেক দূরে চলে গেছি তোমাকে ছেড়ে,
তোমাকে দেখার পর আমার যে কি ইচ্ছে করতো
তোমাকে ভালোবাসতে! তোমাকে স্পর্শ করতে!
কিন্তু ওই যে অসুখ, তাই আমি সদা দূরে থেকেছি।
তোমাকে না বলে যাওয়াটা অপরাধ মনে হয়েছিল
তাই ডাইরির পাতায় লিখে গেলাম;
এখন আমি সবার থেকে অনেক দূরে!
তবে এতটুকু জেনে রেখ-
আমি যেখানেই থাকিনা কেন;
আই মিস ইউ!


রচনাকালঃ- ১০/০৬/২০১৯