সার্চ করুন

সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৯

বিনিদ্র প্রহর


জানি,
অচিরে আমি চলে গেলে কেউ একটুও কাঁদবেনা!
শ্রাবণের অজস্র বারিধারা অশ্রু হয়ে
নয়ন থেকে ঢলে পড়বে প্রকৃতির কোলে,
তবু তার কান্নার সঙ্গে কারো কান্না এক হয়ে যাবেনা।
শুধু সযত্নে লালিত এলবমের ছবিগুলো বিবর্ণ হয়ে রবে
আর আমার প্রিয় খবরের কাগজ
গুলোতে জমবে বিস্তৃতির একরাশ ধূলো।
ঘরের চার দেয়ালের মাঝে জমে থাকবে
সহস্র বিরহের দহন মাখা স্মৃতি!
নিথর ঝুলেথাকা জানালার সবুজ পর্দা
উষ্ণ বাতাসে দোল খাবে
শহরের নিয়ন আলোর ভিড় মুছে ফেলতে চায়বে অস্তিত্ব;
কোন এক শেষ বিকেলের অলস মুহূর্তে
যখন বাজবে আমার সেই প্রিয় গানগুলো;
তখন কি কান্নায় কারো বুকটা কেঁপে উঠবে?
দুষ্টু বাবুইপাখির ঝাঁক আমাকে খুঁজে না পেয়ে
শূন্য আলয় ছেড়ে আনমনে চলে যাবে চির দিনের মতো।
এতদিন যে সাদা গোলাপের বৃক্ষকে বড় করেছিলাম
আমার স্পর্শের অভাবে ধীরে-ধীরে হয়ে পড়বে নিস্তেজ,,
নিস্তব্ধ রাতের আঁধারে জ্যোৎস্না সিওরে থমকে দাঁড়িয়ে থাকে
অবাক চিত্তে মেঘের আঁচল তলে  মুখ লুকোবে;
তবু পৃথিবীর নিষ্ঠুর মানুষগুলোর মধ্যে থেকে কেউ বলবেনা
কোথায় হারালো এই আরাফাত নামের ছেলেটা!


রচনাকালঃ- ১২/১০/২০১৯

শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যা


আজ নতুন করে তোমার কথা পড়ল মনে
বৃষ্টিভেজা সমীরে জাগল ব্যাথা, হৃদ কোণে!
তোমার স্মৃতি আজ নীল পলকে
ভেসে উঠল প্রান্তর দ্যুলকে,
ভোলা যে যায়না নিষ্পাপ মুখখানি হায়
রয়েছি আনমনে।
আশ্বিনের ভেজা বৃষ্টিতে তোমার সুর বাজে কানে।
আজ অস্থির ঝড়ের কাতরানিতে কেন জাগল ভয়
পাইনি খুঁজে আজও জ্বলেগো আগুন, নিবিড় ব্যাথায়!
মাতাল বায়ুর ঝাপটা লেগে
অতীতের কথা উঠল জেগে,
একলা পথের পথিক আমি
নাওনাগো টেনে।
তোমায় নিয়ে ভাসব অশ্বিন সন্ধ্যার ভেজা পবনে।


রচনাকালঃ- ২৮/০৯/২০১৯

বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

কলঙ্কিত সভ্যতা


কলি কালের এ-কী পরিহাস
পাপাচারের দুয়ার হয় উন্মুক্ত,
ধরণীর বুকে বাড়ে দানবের চাষ
ব্যাঙ সাপের দলে হয় যুক্ত।

তন্ত্র-মন্ত্রের নামে সিখে কূটনীতি
পরিধান করে গিরিধারী বস্ত্র,
ঢঙী বাবা ডেকে আনে ক্ষতি
প্রকাশ পাই লুকনো সেই অস্ত্র।

উর্ধ্বে কুন্তল মুখে কালো দাড়ি
খুলে দেয় লুণ্ঠিত আশ্রম,
ধন-সম্পদে পূর্ণ করে হাড়ি
নিজেকে ভাবে অপরাজয়ী বিক্রম।

উর্বর জমিনে বুনে শয়তানী বীজ
বিষাক্ত হয়ে ওঠে মাটি!
জন্ম নেয় অগণিত জারজ দ্বিজ
মানুষ হিসেবে নয়তো খাঁটি।

মানব সেবার নামে করে অপকর্ম
আশ্রমে জমে ওঠে রমণীর ভিড়,
গেরুয়া পরিধানকারী ভুলে যায় ধর্ম
শয্যায় মুখরিত হয় গোপন নীড়!

নেশার দ্রব্য দিয়ে করে অজ্ঞান
কামজে মেতে ওঠে ভন্ড পূজারী!
তবু যেন ভাঙেনা সভ্যতার ধ্যান
পুলকে নগ্ন দানব বলাতকারী!

বুদ্ধিহীন সভ্যতার অন্ধ বিশ্বাস
নিয়ে আসে এক মহা-প্রলয়,
শত-শত অঙ্গনার হয় সতীত্বনাশ
বদনামের ছোপে কলঙ্কিত আলয়।

সভ্যতাকে বিষ মুক্ত করতে
ছুড়তে হবে লক্ষ্যভেদকারী বাণ,
সুন্দর ধরা নিজ হাতে গড়তে
নেমে আসবেনা কভু ভগবান।


রচনাকালঃ- ২৬/০৯/২০১৯

শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯

শেষ ঠিকানার নিঃঝুম পথে


শেষ ঠিকানার নিঃঝুম পথে
দেখি জীর্ণ পাতা ঝরে পড়ে,
তুমি কেন হায় ময়ুরী সেজে
ছুটে এলে আবেগী ঝড়ে।

চারিদিকে মোর বিরহ এসে
ভাঙ্গা ইটের প্রাসাদ গড়ে,
বৃথায় কেন হায় প্রণয়ের স্বপ্ন
দেখলে তুমি নয়ন জুড়ে।

এলে আবেলায় মোর দুয়ারে
ফুলহীন সুকনো ডাল উঠছে নড়ে,
কি সওগাত দিয়ে টানব এ বুকে
নিভেছে আলো আঁধার মুড়ে।


রচনাকালঃ- ০২/০৮/২০১৯

শনিবার, ৬ জুলাই, ২০১৯

অশনি সংকেত


ঢলেপড়া রজনীর নিস্তব্ধতায়
জুলুমের দৃশ্য ভেসে ওঠে নয়নজলে!
বিস্তীর্ণ গগন ঢেকে ফেলে কালো মেঘ
শ্রাবণের বারিধারা খুঁজে ফিরে পুরোনো কাশবন,
দিশাহীন মন বিষাদের চাদর মুড়ি দিয়ে
অতৃপ্ত তৃষ্ণায় কাতরায় অদৃশ্য রাতের অন্ধকারে।

দিনের আলোয়,
সব স্বাভাবিক প্রতিচ্ছবি ধারণ করে।
সন্ধ্যা গড়িয়ে আঁধার নামে
অপরিস্কার জলে ভেসে ওঠে নীল শতদল,
গাঢ় এঁদোয় দেখা যায় না পথ
নীরব মৌনতায় বিষাক্ত বায়ু থমকে দাঁড়ায় অস্থির চিত্তে!
অনিষ্ঠের আহ্বানে নিজেকে হারাতে
কারা হেঁটে যায় নীরব গোরস্থানের পাশদিয়ে,
উত্তপ্ত জমিনের বুকে অসহায় বৃক্ষ
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিৎকার করে বলে ওঠে;
পিশাচের দেশে রক্তের খেলা! দুর্নীতির মেলা!
তার প্রাণফাটা রোদনে প্রদোষ সজ্জিত হয়
এক অতভূত অদৃশ্য গোপন রহস্যে।

অক্লান্ত মাছ তীরে মৃত্যুর দিনগুনে জোয়ারের অপেক্ষায়!
নাটকের রঙ্গমঞ্চে নব অভিনেতা ছোবল মারে,
সতর্কবাণীর সাইরেন বাজে চিন্তিত মস্তিস্কে
দূর থেকে ভেসে আসে আওয়াজ-
আগামীতে পৃথিবী সজ্জিত হবে দুর্ভিক্ষের উষ্ণ পবনে!
তবু আশার কিরণ এসে আঘাত করে হৃদে;
আবার মুহূর্তেই স্বপ্ন হয়ে মিশে যায় আঁখির পাতায়।

মেতে ওঠে নিশিথ নগ্ন হরিণীর বাজারে!
দিশাহীন নদী সুর ভুলে পথ খুঁজে,
বিবশ শশী সবকিছু দেখে নিথর দৃষ্টিতে
গোপন রহস্য দেয় ভয়ঙ্কর প্রলয়ের অশনি সংকেত।
ক্ষীণ সুরে বলে ওঠে;
আগামী প্রজন্ম, সাবধান! হুশিয়ার!
হয়তো একদিন দ্রোহের তুফান উঠবে যামিনীর বাগিচায়
সব তচনচ করে যাবে!
আঙিনায় পড়ে রইবে বাস্তবের কিছু নিদর্শন
হয়তো একদিন বিষাদী বাতাস বয়ে যাবে সুদূরে,
আসবে শ্রাবণ প্রখর বর্ষণের পথ ধরে
আবর্জনা ধুয়ে মুছে পুনরয় নব ধরণী গঠন করবে।


রচনাকালঃ- ০৫/০৭/২০১৯

সোমবার, ১০ জুন, ২০১৯

ডাইরির পাতা


কখনও ভাবিনি
তোমার সঙ্গে মাঝ পথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে,
হয়তো ভেবেছিলে আমি তোমায় চিনতে পারিনি
তুমি সেই রমণী যাকে প্রতি রাতে স্বপ্নে দেখি‌।
ভাবতেই পারিনি; সত্যি বলছি-
তুমি আমার কল্পনার থেকেও অনেক সুন্দর!

কি সুন্দর করে সেদিন বলেছিলে
আচ্ছা আপনি সেই কবি তাই না?
কেন বলেছিলে সেটা আমি জানতাম।
সেদিন বসে কফি খেতে-খেতে
ওই চোখে দেখেছি অতভূত মায়া!
যেন আমার সামনে ভাসছে একটি নিস্পাপ মুখ।
মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝেছিলাম;
তোমার চোখ অন্য কারো ছবি আঁকেনা
ওই মনের দুয়ারে যে কড়া নাড়ে সেটা হলাম আমি।

আজ চদ্দই ফেব্রয়ারি
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস;
হ্যাপি ভ্যালেনটাইন্স-ডে তরুণিমা;
আই মিস ইউ!

আমি হলাম সেই ঘুড়ি
যে উড়তে উড়তে বৃক্ষের ডালে আটকে যায়!
তাকে কেউ ছাড়ায় না; বৃষ্টিতে ভিজে;
রোদে পুড়ে তবু পাতার ফাঁকে আটকে থাকে।
তুমি কখনো মরুভূমির বুকে পথিক দেখেছ?
তৃষ্ণার তাড়নায় সে চারপাশে দেখে শুধু জল,
অবশেষে জলের কাছে গেলে আর কিছুই মিলেনা!

অনেক মিস করছিলে আমাকে তাই না?
থাকতে না পেরে ছুটে এসেছ আমার খোঁজে!
আমি জানতাম তুমি আসব;
হয়তো তখন আমি আর থাকব না!
না তুমি দেরি করোনি, আমার হাতেই সময় ছিলনা।
জানো এখন আফসোস হচ্ছে
কয়েকটা দিন যদি তোমার সাথে কাটাতে পারতাম!
আমি এমন বলছি বলে অবাক হচ্ছো?
সত্যি বলছি তোমাকে কখনো দূরে সরাতে চাইনি,
তুমি আমার হাজার রাতের স্বপ্ন!
কিন্তু কি করব বল; মায়া বাড়াতে চাইনি-যে!
হ্যাঁ তরুণিমা আমি সেই মানুষদের মধ্যে একজন
যে জানতো তার মৃত্যুর দিনক্ষণ!
আমার ক্যানসার ছিল
জানতাম আর বেশি দিন বাঁচব না,
এ কথা অনেকবার তোমায় চেয়েছি বলতে
কিন্তু বিশ্বাস কর কোথায় যেন আটকে যেতাম-
বারংবার ওই ঝুলে থাকা ঘুড়িটার মত।
হ্যাঁ তরুণিমা আজ ওই ঘুড়িটাকে কে যেন খুলে দিয়েছে!

আজ এই অসময়ে
অনেক দূরে চলে গেছি তোমাকে ছেড়ে,
তোমাকে দেখার পর আমার যে কি ইচ্ছে করতো
তোমাকে ভালোবাসতে! তোমাকে স্পর্শ করতে!
কিন্তু ওই যে অসুখ, তাই আমি সদা দূরে থেকেছি।
তোমাকে না বলে যাওয়াটা অপরাধ মনে হয়েছিল
তাই ডাইরির পাতায় লিখে গেলাম;
এখন আমি সবার থেকে অনেক দূরে!
তবে এতটুকু জেনে রেখ-
আমি যেখানেই থাকিনা কেন;
আই মিস ইউ!


রচনাকালঃ- ১০/০৬/২০১৯

রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯

অবোধ জাতি


মুসলিম সমাজে উদিত হয়
মুখোশধারী যত ভন্ড পীর,
করেনাকো তারা আল্লাহকে ভয়
অর্থের লোভে মন অস্থির।

লঙ্ঘন করে বিশ্বনবীর বাণী
চোখে-মুখে ছোপ লালসার,
অভিনয়ে ফেলে নয়ন পানি
খুন করে অজ্ঞানীর ভরসার!

অবুঝকে বারংবার দেখায় স্বপ্ন
তাদের ভক্তিতেই মিলবে জান্নাত,
সত্য কভু হয় না নগ্ন
দোয়া করেই পাতে দুহাত।

কবরে অবোধ সিজদায় রত
নির্দ্বিধায় চাপিয়ে দেয় চাদর!
মুমিনের ঈমান ক্ষত-বিক্ষত
ভক্ত নারীকে করে আদর।

জ্বলে কত ধূপকাঠি মোমবাতি
মানত মানে মোরগ খাসি,
অন্ধ বিশ্বাসে মগ্ন জাতি
পীরের চোপায় ফোটে হাসি।

সঠিক তথ্যে লাগে দ্বন্দ্ব
পাপাচারে লিপ্ত পীর বাবা!
প্রত্যহ ব্যবসা চলেনা মন্দ
বুদ্ধিহীনের বুকে মারে থাবা।

মুসলিম কুলকে করে বিভ্রান্ত
তারা সত্য করেনা স্বীকার,
আঁধার প্রলয় তোলে দুর্দান্ত
অবোধ পাই না গুনাহে নিস্তার।

দেখি অনেকেই আছে এমন
নিজেকে দাবি করে খোদা!
জানিনা আবার তারা কেমন
গতরে মাখে নরকের কাদা।


রচনাকালঃ- ২১/০৪/২০১৮

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৯

প্রথম দেখা


এসো প্রিয় আরো কাছে থেকনা দূরে,
ফুটেছে ফুল কৃষ্ণচুড়া গাছে দেখ ফিরে,
থেকনা আর দূরে!

এসো আরো কাছে, লজ্জায় নত কোরোনা শির!
তোমার আগমনের ছোঁয়া পেয়ে বাতাস হল অস্থির।
আমি এসেছি ভালোবাসার আশায়
বুঝে নাও ব্যাকুল চোখের ভাষায়,
শূন্য মনের গভীরে ঘুনে পোকা খায় কুরে।
ওগো চিরন্তনী আমার!
কাছে এসে হাতটি ধর, থেকনা আর দূরে।

আজ জেগেছে তোমার মনে প্রথম প্রেমের অনুভূতি,
চেয়ে দেখ জ্যৈষ্ঠের মেঘে ঢাকা হাসে প্রকৃতি,
পাখির ডাকে থমকে যায় বন-বাদাড়
আবেগী হৃদয়ে প্রেম করে দাও উজাড়!
শিউরে ওঠে আমের মুকুল
জল টলমল নদীর দুইকূল।

গরবিনি! চোখে চোখ রেখে একটুখানি মুচকি হেসে
পরিয়ে দাও প্রেমের টিকা আমায় ভালোবেসে!
প্রিয়! আজ প্রথম দেখে তোমায়
ওগো পূর্ণ হল শূন্য সময়,
পরাব গলায় শিউলির মালা ভাগীরথীর তীরে।
ওগো সুবাসিনী আমার!
বাড়িয়েছি দুহাত-কাছে এসো, থেকনা আর দূরে।


রচনাকালঃ- ১৭/০৪/২০১৯

বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৯

অভাগার কান্না

আসাম রাজ্যে গত ০৯/০৪/২০১৯ একটি মুসলিম মানবের ওপর অকত্ব অত্যাচার চালানো হয়! ভেঙে দেওয়া হয় তার হোটেল, তাকে মেরে রক্তাক্ত করে বল পুর্বক শূকরের কাঁচা মাংস খাওয়ানো হয়! যাতে তার ইমান নষ্ট হয়ে যায়, এমন করুণ দৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে সত্য ঘটনা অবলম্বনে কবিতাটি রচিত হয়েছে।
..........................................................


পান্থাবাস খুলি স্বপ্ন নিয়ে
আসবে সংসারে সুখ-শান্তি,
দিনভর রত খাদ্য দিয়ে
নিশির আঁধারে নামে ক্লান্তি।

সূর্যদয়ের পুর্বে ভাঙে ঘুম
নেই বৃত্তির কোন নিস্তার,
সুস্বাদু ভোজ্যে লাগে ধুম
উন্মুক্ত করি হোটেলের দ্বার।

হরেক সবজি গো-মাংস
থাকে মাছ মুরগি খাসি,
রান্না আমার জীবনের অংশ
সবার সুরতে ফোটাই হাসি।

উনুনে জ্বলে ভাতের হাড়ি
দোকানে বহু খোদ্দের আসে,
তেলের কড়ায়ে খুন্তি নাড়ি
খানা খেতে পথচারী ভালোবাসে।

আসে পৃথক ধর্মের মানব
পুলকে খায় হস্ত চেটে,
চক্রান্তে থাকে ভয়ানক দানব
লাথি মারে বিবশের পেটে!

হটাত দেখি এ-কী দুর্গতি
ছুটে আসে যুবকের দল,
হবে বুঝি করুণ পরিণতি
দেখায় ওরা কত বাহুবল।

মুখোশে আটা ওদের বদন
হাতেপায়ে ধরি করিনিতো ত্রুটি,
তবু শোনেনা কোন বারণ
যেন অগ্নিময় ত্রিনেত্রের ভ্রূকুটি!

ভেঙে করে দেয় চুরমার
দেহ শোণিতে হয় লাল!
প্রাণ ভিক্ষা দাও একবার
খিচে নেয় গতরের খাল!

দুহাতে গলা টিপে ধরে
নিয়ে আসে শূকরের মাংস,
চোপা ফেড়ে দেয় পুরে
যাতে হয় ইমান ধ্বংশ!

কেউ আসেনি তো এগিয়ে
করেনি সেদিন কেন প্রতিবাদ,
জ্ঞানের অভাবে সভ্যতা পিছিয়ে
মানবের অন্তরে জন্মেছে খাদ।

অন্ধ সাম্প্রদায়ীকতার কবলে পড়ে
তিলে তিলে প্রতিক্ষণে মরি!
করাঘাতে ওঠে হৃদয় নড়ে
তবু নিয়তির হাত ধরি।

নোংরা রাজনীতি আর কতকাল?
তোমাদের করি যদি বিশ্বাস,
তবু বুনবে ষড়যন্ত্রের জাল
দূষিত পবনে রুদ্ধ নিঃশ্বাস।


রচনাকালঃ- ১১/০৪/২০১৯

শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯

দুর্ভিক্ষ


মফস্বলে নেমে আসে দুর্ভিক্ষের ছায়া!
ক্ষুধার জ্বালায় চারিদিকে হাহাকার,
শিশু-নারীর আঁখি যেন শোকাহত
রোজগার নেই; বেড়েছে বেকারত্ব।

গ্রাম উঠে গেল শহরে,
ধানের গোলা, ঘর পড়ে রইলো শূন্য।
মাঠে ফসল বুনে না চাষী
চিহ্নহীন আলয়ে নামে নিস্প্রদীপ অন্ধকার,
আগাছায় ভরে গেছে আঙিনা
সেই আগের মত দেখা মিলেনা রাখালের,
বিকেল হলে মেঠো পথে আসেনা ধেনু
তাঁতি বুনেনাকো তাঁত
কেউ আসে না জল নিতে পুকুর ঘাটে।

বুনো ঘাসে ঢেকেছে পল্লীর রাস্তা,
সূর্য অস্ত যায় -
সন্ধ্যায় ঠাকুর ঘরে বাজে না শাঁখ!
কেউ ভাঙে না ধান; পিষে না গম;
ঘোরায় না তেলের ঘানি।
লোহার তালা ঝুলে কুমোরের দুয়ারে
যেন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ দোকানপাট,
যেখানে একদিন শোনা যেত হাতুড়ির প্রহার
সেও সর্বস্ব বিকিয়ে চলে গিয়েছে শহরে।
শরতের পর নামে শীত
তবু রাহার ধারে জ্বলেনাকো শিখা,
কোথায় হারিয়ে গেল মোড়লদের চুলোচুলি
কিশোররা ওড়ায় না ঘুড়ি;
গভীর রাতে -
ডাকে না কুকুর পথিকের কদমের শব্দে।

ঐ দূর প্রান্তরে সবুজ ক্ষিতিজ হাত নেড়ে ডাকে,
খোয়াবের করাঘাতে ব্যথিত হয়ে
প্রতীক্ষার প্রহর গুনে সোনালি ধান!
ডাক শুনি শহর নগরের পথে পথে,
শ্মশান আর গোরস্থানের মত -
জমে ওঠে মৃতপ্রায় জনস্রোতের ভিড়।

প্রতিজ্ঞাবদ্ধ চিত্তে নয়নের শোকাশ্রু মুছে
তারা ভাবতে থাকে -
দেহাতের প্রতিটা গৃহে ফিরবে সুদিন,
তাই বেজে ওঠে শহর নগরের মার্গে পদশব্দ।
আশাবাদী মন নিয়ে তারা ভাবতে থাকে -
এবার বুঝি দূর হবে বেকারত্ব, ঘুঁচবে দুর্ভিক্ষ!
আসমানে ওঠে স্নিগ্ধ শশী
শুনি নদীর জলের শব্দ; পতগের গান;
চেয়ে থাকে সবাই মুগ্ধ নেত্রে গগন পানে,
হয়ত প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে
হয়ত উঠবে নব মিহির।


রচনাকালঃ- ০৪/০৪/২০১৯

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৯

বঙ্গ - (দ্বিতীয় পর্ব)


শীর্ষে সদা ভেসে বেড়ায়
কালো কালো জলদের ভেলা,
দ্যুলকে এসে বসতে থাকে
ফোটা ফোটা বৃষ্টির মেলা।
বেলা গড়াতেই জমিনের বুকে
যখন নামে বৈশাখী প্রলয়,
বন বাদাড়ের পশু পাখি
খুঁজে ফিরে নীড়ে আশ্রয়।
এই দ্বীপের চারি পাশে
খেলা করে তৃণ পারাবার,
হরিণীর মত সমীর এসে
নিত্য কদম চুমে তার।
দোয়েল ফিঙে টুনটুনির সুরে
পথের পথিক দিশা হারায়,
শরত্ কালের শিশির ঝরে
অপরূপ সুন্দর শ্যামল ধারায়।
ভিন্ন প্রজাতির পশু পাখি
জল খেতে আসে তীরে,
কুসুমের জঙ্গলে রঙিন হয়ে
বালুর চর হাসে ধীরে।
এই গ্রামের উর্বর মাটি
কত শস্য করে দান,
শীতের আগমন হলে রায়ের
ফুল মধুকরকে জানায় আহ্বান।
সেখানে উড়ে আসে সহস্র
রঙিন কীটপতঙ্গ আর প্রজাপতি,
ধান ক্ষেতে ছুটে আসে
দল বেধে বুনো হাতি।
উজান তটিনীর স্বচ্ছ্ব নীরে
পড়ে স্নিগ্ধ চাঁদের কিরণ,
দিবাকর প্রত্যহ দুহাত বাড়িয়ে
তিমিরকে করে নেয় বরণ।
কত পথ উচু গিরির
কোল ঘেঁষে চলে যায়,
কত শহর কত নগর
ব্যস্ততার ভিড়ে পড়ে রয়।


রচনাকালঃ- ২৬/০৩/২০১৯

বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯

বঙ্গ - (প্রথম পর্ব)


গ্রামের ওই মেঠো পথে
সবুজ ক্ষেতের নেই শেষ,
শিতল পবনে দুলে কার
ঢেউ খেলানো মাথার কেশ।
সর্ষের জমিতে উড়ে আসে
সারি বেধে প্রজাপতির ঝাঁক,
বসন্তের আগমনে শোনা যায়
কোকিল পাখির সুমধুর ডাক।
দল বেধে বক এসে
সেখানে গাঁথে বনফুলের মালা,
গ্রীষ্ম কালে জোনাকি পোকা
এঁদোয় জ্বালে মানিক আলা।
তারি মাঝে গজিয়ে ওঠে
নব সবুজ ধানের চারা,
মাতৃকার আঁচলের ছায়া পেয়ে
যেন ধন্য সতেজ ধারা।
কনক ভূমিতে গজায় ফসল
চাষীদের আনন্দে দিন কাটে,
হরেক রকম শস্য ভান্ডার
বসে এই গ্রামের হাটে।
শিশু শাল সেগুন বৃক্ষে
ঘেরা অরণ্য দেয় ছায়া,
আম জাম কাঠাল ফল
ফুলে প্রাণে জাগে মায়া।
আলো ছায়ার লহর খেলে
যায় কাঁচা পাতার ফাঁকে,
সূর্যের জ্যোতি লুকোচুরি করে
আকাশ ছাওয়া মেঘের বাঁকে।
গাঙের তটে গ্রীষ্ম কালে
জেগে ওঠে বালুর চর,
সন্ধ্যা নামলে ফিরে আসে
সুবাস ভরা কুঞ্জে খেচর।
হরিত্ গহনের কচি পত্র
দুলে হিমেল হাওয়ার সুরে,
শৃঙ্গী ঘেঁষে ঝর্ণা নামে
ঐ দেখা যায় দূরে।


রচনাকালঃ- ২৫/০৩/২০১৯

বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯

অনুতাপ


দুর্যোগ পথে, গর্জন মুখর শ্রাবণ বারি ঝরে,
কোন ক্লান্ত পথিক এসে কড়া নাড়ে কুঁড়ে ঘরে?
আশ্রয়ের আশায় করে ভিড়,
মস্তক গুঁজতে চায় নীড়,
ক্লান্ত পথিক চমকে ওঠে জলদ গর্জনের ডরে।

মিথ্যে আশা জাগিয়ে নিত্য দিয়েছি কত ফাঁকি!
লজ্জায় নত করি শির লুকিয়ে ফিরি আঁখি;
আজ ব্যাথা জাগে প্রাণে!
হয়ত ঠকিয়েছি অন্তর জানে,
কথা দিয়ে রাখিনি কথা পড়ে রয়েছে বাকী।

পথের ধারে বসে কাঁপছিল রমণী প্রখর শীতে,
চেয়েছিলাম অগতির হাতে একখানি কম্বল দিতে।
দিতে পারিনি দিব বলে,
আমায় না পেয়ে সে গিয়েছিল চলে,
বাদল দিনে সেই দৃশ্য আবার ভেসে ওঠে চিতে।

রোগীকে ঔষধ কিনে দিব বলে গিয়েছিলাম ভুলে-
রাতে কত তার কষ্ট হল, কি হবে সে কথা তুলে!
দ্যুলকে শুনি ডাক তার,
অনুতাপে মরি বার বার,
হাতজোড় করি, তবু ক্ষমা পাব না কোন কূলে।

হাটে এক বৃদ্ধা, ঝুড়িতে নিয়ে বসেছিল ফল
কলা কিনে ছুড়ে দিলাম টাকা করে শত খল;
বাড়ি ফিরে, চিন্তায় মরি আহা
খুঁজে পেল কি না সে তাহা!
আজও সে যেন রয়েছে হাত পেতে চোখে নিয়ে জল।

এক নিরাধার জননী ডেকেছিল বৃদ্ধাশ্রমে,
যাব বলে অবশেষে যাওয়া হয়নি কোন ভ্রমে।
অর্থের লোভে পাইনি সময়,
ফিরিয়ে দিয়েছি তার অনুনয়;
আমার প্রতি তার মাত্রিত্বের ঋণ বেড়েছে ক্রমে।

সদনের আঙিনায় ভিখারি এলে গিয়েছি দূরে চলে,
ধিক্কার দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছি কোথায় কু-কথা বলে!
কোথায় ব্যাথা পেল দেখিনি কখনো,
জীবনের অঙ্কটা মিলেনি এখনো;
স্বচ্ছ্ব মন কালো হয়েছে দূষিত ডোবার শতদলে।

পথের শেষে পরিচয় হল এমন এক বাস্তবতার সনে,
কথা দিয়ে রাখিনি কথা ক্লেশ জমেছে মনে!
নয়ন সম্মুখে ভেসে ওঠে স্মৃতি,
ভুলে গেছি যেন সকল প্রীতি;
হায়, এ অনুতাপের দহনে পুড়ছি ক্ষণে ক্ষণে।


রচনাকালঃ- ২১/০৩/২০১৯

মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৯

মিছিলের মুখ


সেদিনের মিছিলে দেখেছি একটি মুখ,
মুষ্ঠিবদ্ধ শক্ত হাত আকাশের দিকে
শিরের কেশ শিখার বাতাসে কম্পমান,
জনগণের ভিড়ের মধ্যে মিশে গেলেও
সূর্যের মত জ্বলে ওঠে মিছিলের সেই মুখ।

কিছুক্ষণ পরে সভা শেষ হতেই-
ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় জনতার ভিড়,
সকলের হাত নেমে আসে মাটির দিকে।
প্রবল কোলাহলে মানুষের পায়ে পায়ে
কোথায় যেন হারিয়ে যায় মিছিলের সেই মুখ!
কোথাও ভিড় দেখলে থমকে দাঁড়ায়;
যদি খুঁজে পাই হারানো মুখ।

ভিন্ন ভিন্ন মুখোশের আড়ালে মানুষ!
নেই স্বচ্ছ্ব মনে প্রতিবাদের ক্ষমতা,
তাদের হাত উঠে থাকেনা আকাশের দিকে
ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ সমুদ্রে জ্বলে ওঠে না সূর্যের মত তাদের মুখ,
বারংবার আমাকে টেনে নিয়ে যায়
সমুদ্রের স্বপ্নের মত মিছিলের সেই মুখ।

অর্থ প্রাচুর্যের লোভে অন্য সব মুখগুলো
বিকৃত মিথ্যে দিয়ে সত্যকে চেপে রাখে,
নিজের অপরাধ লুকাবার জন্যে
অন্যের মস্তকে চাপিয়ে দেয়া দোষ!
পচা লাশের দুর্গন্ধ ওড়াতে লাগায় সুগন্ধি আতর!
তখন চুপ থাকা ওই প্রতিবাদী মুখ
ধারালো তরবারির মত গর্জে উঠে আমাকে জাগায়!

অন্ধকারে সবার হাতের তালুতে গুঁজে দিই
একটি করে নিষিদ্ধ ইস্তাহার,
ডাক দিই দাসত্বের শিকল ছিড়ে
ফাটল ধরা দেয়াল ভেঙে দিবার জন্য;
যাতে নবরূপে জেগে ওঠে মিছিলের সেই মুখ;
তবেই হবে এই দেশ শৃঙ্খলমুক্ত।


রচনাকালঃ- ১৯/০৩/২০১৯

রবিবার, ১০ মার্চ, ২০১৯

১৯৮৮ সাল


সেদিন ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিল রাজনৈতিক মহল,
তখনো বুঝিনি ওদের অকরুণ খেলা।

নামাজের উদ্দেশ্যে গমন করেছিলাম কাটরা মসজিদে
ভাবিনি এমন নিসংশ হত্যার মুখে পড়ব,
হটাৎ দেখি, এ কি? আচমকা রক্তের খেলায় উঠল মেতে"
ঐ রক্ত পিপাশু দানবের দল গুলি, তির, বল্লম, হাসুয়ার
আঘাতে আমাদের দেহকে করেছিল ক্ষত-বিক্ষত!
সেদিন শহরের রাজপথে ঢেলেছিলাম তাজা লহু!
হিংস্রো বাঘের মত আমাদের লাশগুলো
টেনে হিচড়ে করেছিল বীভৎস;
ওরা পশু, নেড়ে কুকুর, পিশাচের দল।

আমাদের অপরাধ কি ছিল সেদিন?
আমরা মুসলমান তাই?
কেন সেদিন বাধা দেওয়া হয়েছিল
কেন গণহত্যা করা হয়েছিল আমাদের!
সেদিন পুলিশ ছিল নীরব
আমাদের চিৎকারে কেউ ছুটে আসেনি,
স্টেসনের প্লাটফর্মের রক্ত চেটে চেটে খেয়েছে
অগণিত শেয়াল, হায়না, আর নেড়ে কুকুর"
রাতের অন্ধকারের আশ্রয় নিয়ে অতি গোপনে
আমাদের লাশ পুঁতেছিল কাটি গঙ্গার তীরে।

আজ ৩১ বছর পর -
চাষীদের কোদালের আঘাতে নবরূপে জেগেছি আমি।
আমার মৃতদেহের কঙ্কালে নেই মাংসের কোন নিদর্শন
আছে শুধু মাথার খুলি আর বুকের হাড়,
ধীরে-ধীরে জমে গেল বহু মানুষ
ছুটে এল আমার ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা!
কঙ্কালের দিকে সে চেয়ে রইলো নিথর দৃষ্টিতে।

আমি ভাবলাম -
হয়ত ওদের মত কোন দানব হাতে হাসুয়া নিয়ে বলবে,
ছুড়ে ফেলে দে ঐ কঙ্কাল নদীর জলে!
কিন্তু এ কি?
কোন এক চাষী ভাই করুণার স্বরে বলে উঠল
আহা-রে! মানুষটা কে না-জানি কত কষ্ট দিয়ে
মেরে এখানে পুঁতে রেখেছে; ইস!

আজ কারো মনে নেই সেদিনের ইতিহাস
ভুলে গেছে সবকিছু সমাজ ও দেশ।
৩১ বছর পরেও আমি ভুলিনি ঐ দুর্বিষহ পরিণতির কথা
ভুলিনি সেদিনের লহুমাখা আমাদের মৃত্যুকে!
আজও মেলেনি আদালতের দ্বারে সুবিচার,
আছি প্রতীক্ষায় রত আমার অতৃপ্ত আত্মা নিয়ে"
সেই দিনের; যেদিন প্রকাশ্যে আসবে ১৯৮৮ সালের হত্যাকাণ্ড।


রচনাকালঃ- ১০/০৩/২০১৯

বুধবার, ৬ মার্চ, ২০১৯

সন্ত্রাস মুক্ত শান্তির প্রতীক্ষা


রণক্ষেত্রের অনল ছড়িয়ে পড়ল দিগন্ত থেক দিগন্তে,
কী হবে আর ভীরুর মত বেঁচে থেকে?
কতদিন এভাবে প্রাণ দিতে হবে আর
ভারতীয় সীমান্তে থাকা সেনাদের?
শত-শত প্রাণ বলির দুঃখ প্রকাশ করবে
দুই মিনিট নীরবতা পালন করে?
ওপারের শত্রুদের প্রশ্রয় দিবে কতদিন?
থেমে যাওয়া তোমাদের সঙ্কল্প আর আত্মবিশ্বাস,
লুপ্ত মনবলের আঘাতে ক্ষীণ হতে থাকবে কতকাল?
রাজনীতির দেওয়া শান্তনা পুরস্কারে তুষ্ট হয়ে
কতক্ষণ ভুলে থাকবে বীর সৈনিকদের বলিদানকে?
কতক্ষণ প্রতীক্ষায় থাকবে সঠিক সময়ের?
কত সন্তান হারাল তার পিতা!
কত মা'য়ের কোল হল শূন্য!
কত স্ত্রী সজ্জিত হয়েছে বিধবার বেশে!
নাও ভারতীয় সেনাদের প্রাণ বলির প্রতিশোধ,
দেশ থেকে উপড়ে ফেল সন্ত্রাসবাদের শিকড়।
চল, মানব হত্যাকারী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে
সশস্ত্র অভিযান চলিয়ে দমন করি ওদের অস্তিত্ব,
উদিত হোক আগামী প্রভাতে নব সূর্যের আলো।
আতঙ্কের ভয় মুছে গিয়ে গজিয়ে উঠুক
শান্তির বৃক্ষ সকলের ঘরে-ঘরে।


রচনাকালঃ- ০৬/০৩/২০১৯

শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৯

পথ চাওয়া


নাই বা পেলাম ওগো প্রিয় তোমার ভালোবাসা,
দিনের শেষে ফুরায় যেন আমার সকল আশা!
মন ভোলানো রূপ খানি
দেখে তব সবাই জানি,
ওরা করে তোমায় নিয়ে মিথ্যে অঙ্গিকার
মনের আঙিনায় তুমি স্বপ্নের রাণী এ আমার অহঙ্কার।

সবাই যখন তোমাকে নিয়ে দেখবে রঙ্গিন স্বপ্ন,
দূর থেকে রচতে তোমায় গভীর ধ্যানে হব মগ্ন।
নোনা জলে অস্পষ্ট আঁখি হবেনা ক নগ্ন!
বিরহে কাতর মনে
রচব কবিতা নির্জন গহনে,
নীল কলমে দুলবে হয়ে অশ্রু বেদনার!
বুকের ভুবন জুড়ে থাকবে তুমি এ আমার অহঙ্কার।

যেদিন চিরতরে অস্ত যাবে এ জীবনের সবিতা,
পড়ে থাকবে পৃথিবীর বুকে বিরহের সেই কবিতা!
উঠবে চাঁদ নীল দ্যুলকে
দেখবে চেয়ে অশ্রুসিক্ত পলকে!
উর্ধ্বপানে চেয়ে জাগবে রজনী নির্জনে
আঘাত পেলে আমার কথা পড়বে তোমার মনে।
চার দেয়ালের মাঝে বাড়বে সেদিন দুঃখ হাহাকার!
হৃদয় মাঝে বসিয়েছি তোমায় এ আমার অহঙ্কার।

যখন তোমার বুকের মাঝে জাগবে তীব্র ব্যাথা,
উঠবে কেঁদে সেদিন প্রিয় ভিজবে শয়নের কাঁথা!
বুঝবে না কেউ তোমার কথা -
নীরবে সবাই হাসবে;
গোপনে প্রিয় নয়ন জলে ভাসবে!
নতুন করে সেই কবিতা আবার তুমি পড়বে
একাকী নিরালায় আমায় নিত্য খুঁজবে।
শীতল বাতাসের পরশে হাসনাহেনা উঠবে দুলে,
ওরা তোমায় দুদিন বাদে যাবে ভুলে।
আমার কবিতার অক্ষরে অক্ষরে
থাকবে স্মৃতি বেদনার লহরে!
থাকবে তোমায় না পরানো বেলি ফুলের হার
মনের গভীরে থাকবে তুমি এ আমার অহঙ্কার।

সন্ধ্যার প্রদীপ জ্বালবে যখন সাধের কুঁড়ে ঘরে,
আবেগী মনে ভাববে প্রিয় সেই কবির তরে।
স্নিগ্ধ শশী উঠবে নীলে
প্রান্তরে আকাশ-মাটি যাবে মিলে,
থাকব না আমি; থাকবে তুমি সবুজ ধারাতে
শিউলি ফুলের গাঁথবে মালা খোপায় জড়াতে।
তুমি আমার প্রিয়তমা, আকাশ ভরা চাঁদ,
নবরূপে পাতবে ওগো ব্যাকুল মায়ার ফাঁদ!
নীল রঙ্গা শাড়ি পরে
গোপন নয়নে খুঁজবে কারে?
সমুদ্র তটে উঠবে জোয়ার উঠবে ঢেউয়ের বাণ
চির দুঃখী কবির তরে কাঁদবে তোমার প্রাণ!

নাই বা এলে প্রিয় আমার মনের দ্বারে,
তোমায় রেখে গেলাম সুরের স্বয়ম্বরে।
জানিনা তুমি কার আশায় আছো পথ চেয়ে,
আমায় ভুলে যাবে হয়ত তাকে খুঁজে পেয়ে;
সেসব কথা জানার নেই কোন অধিকার
কল্পনায় আঁকা চিত্র তুমি এ আমার অহঙ্কার।


রচনাকালঃ- ২৫/০১/২০১৯

শুক্রবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৯

ইচ্ছেডানা


হয়ত তোমায় পাব একদিন খুঁজে,
বৃক্ষ থেকে তুলে রক্তিম গোলাপ;
তোমার খোপায় দিব গুঁজে।
পাব তোমায় খুঁজে!

ঐ সুদূরে রায়ের ক্ষেতে
মৌমাছি প্রজাপতি উঠছে মেতে,
ওইখানে তুমি ছুটে এসে
ধরবে আমার হাত মুচকি হেসে।
নেবে সবি বুঝে;
পাব তোমায় খুঁজে!

ঐ পথের শেষে সবুজ বনের ওপারে
না পাবার বেদনা লুকিয়ে খোঁজো যারে,
ঘোমটা তুলে দেখবে আকাশ
আনবে খবর শীতল বাতাস;
হৃদয়ের বাঁধন যাবে টুটে!
অরণ্যের মাঝে আসবে ছুটে।
দিবে চিঠি নীল খামের ভাঁজে;
পাব তোমায় খুঁজে!


রচনাকালঃ- ১১/০১/২০১৯

শুক্রবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৯

আমি যদি প্রকৃতি হতাম

আমি যদি প্রকৃতি হতাম
আর তুমি হতে যদি হরিণী।

তবে শীতের প্রথম পরশ মাখা বিকেলে,
কোন এক সবুজ মাঠের প্রান্তে;
ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত শর্ষের ক্ষেতে;
স্নিগ্ধ গোধূলি লগ্নে তোমার হাত ধরে
সেই নির্জন স্থানে ছুটে যেতাম।

তোমার প্রতীক্ষিত নয়নের পানে চেয়ে,
কোমল হস্তে রক্তিম গোলাপ দিয়ে
বলতাম না বলা সেই কথা;
তুমি লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নিতে আঁচলের আড়ালে!
নিমেষে মিলে মিশে একাকার হত দুটি মন।
ঝরে পড়ত অজস্র সুগন্ধি বনফুল্
লতাপাতার ফাঁকে থাকা নীড় থেকে
বিহঙ্গরা কিচিমিচি শব্দে গায়তো গান;
ময়ুর তার পেখম মেলে জানাত স্বাগত;
আমাদের দিশাহীন আনন্দের বর্ষণে
কেঁপে উঠতো দ্যুলক!

আমাদের নয়নে উল্লাশের ছায়া
আমাদের কন্ঠে বেজে উঠতো গান।

হয়তো গা ভাসিয়ে দিতাম জ্যোৎস্নার আলোয়
হয়তো অপূর্ণ তৃষ্ণা মিটতো পূর্ণিমা রাতে,
একটা দীর্ঘশ্বাসের পর ছেয়ে যেত স্তব্ধতা
ধীরে-ধীরে নেমে আসতো তৃপ্তিময় শান্তি;
তবে আমাদের জীবনে শূন্যতা আর থাকত না!
থাকত না প্রণয়ে ব্যর্থতার কোন কষ্ট!
তবে চিরতরে ঘুচে যেত জীবনের অন্ধকার।

আমি যদি প্রকৃতি হতাম
আর তুমি হতে যদি হরিণী!


রচনাকালঃ- ০৪/০১/২০১৯