সার্চ করুন

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৯

বঙ্গ - (দ্বিতীয় পর্ব)


শীর্ষে সদা ভেসে বেড়ায়
কালো কালো জলদের ভেলা,
দ্যুলকে এসে বসতে থাকে
ফোটা ফোটা বৃষ্টির মেলা।
বেলা গড়াতেই জমিনের বুকে
যখন নামে বৈশাখী প্রলয়,
বন বাদাড়ের পশু পাখি
খুঁজে ফিরে নীড়ে আশ্রয়।
এই দ্বীপের চারি পাশে
খেলা করে তৃণ পারাবার,
হরিণীর মত সমীর এসে
নিত্য কদম চুমে তার।
দোয়েল ফিঙে টুনটুনির সুরে
পথের পথিক দিশা হারায়,
শরত্ কালের শিশির ঝরে
অপরূপ সুন্দর শ্যামল ধারায়।
ভিন্ন প্রজাতির পশু পাখি
জল খেতে আসে তীরে,
কুসুমের জঙ্গলে রঙিন হয়ে
বালুর চর হাসে ধীরে।
এই গ্রামের উর্বর মাটি
কত শস্য করে দান,
শীতের আগমন হলে রায়ের
ফুল মধুকরকে জানায় আহ্বান।
সেখানে উড়ে আসে সহস্র
রঙিন কীটপতঙ্গ আর প্রজাপতি,
ধান ক্ষেতে ছুটে আসে
দল বেধে বুনো হাতি।
উজান তটিনীর স্বচ্ছ্ব নীরে
পড়ে স্নিগ্ধ চাঁদের কিরণ,
দিবাকর প্রত্যহ দুহাত বাড়িয়ে
তিমিরকে করে নেয় বরণ।
কত পথ উচু গিরির
কোল ঘেঁষে চলে যায়,
কত শহর কত নগর
ব্যস্ততার ভিড়ে পড়ে রয়।


রচনাকালঃ- ২৬/০৩/২০১৯

বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯

বঙ্গ - (প্রথম পর্ব)


গ্রামের ওই মেঠো পথে
সবুজ ক্ষেতের নেই শেষ,
শিতল পবনে দুলে কার
ঢেউ খেলানো মাথার কেশ।
সর্ষের জমিতে উড়ে আসে
সারি বেধে প্রজাপতির ঝাঁক,
বসন্তের আগমনে শোনা যায়
কোকিল পাখির সুমধুর ডাক।
দল বেধে বক এসে
সেখানে গাঁথে বনফুলের মালা,
গ্রীষ্ম কালে জোনাকি পোকা
এঁদোয় জ্বালে মানিক আলা।
তারি মাঝে গজিয়ে ওঠে
নব সবুজ ধানের চারা,
মাতৃকার আঁচলের ছায়া পেয়ে
যেন ধন্য সতেজ ধারা।
কনক ভূমিতে গজায় ফসল
চাষীদের আনন্দে দিন কাটে,
হরেক রকম শস্য ভান্ডার
বসে এই গ্রামের হাটে।
শিশু শাল সেগুন বৃক্ষে
ঘেরা অরণ্য দেয় ছায়া,
আম জাম কাঠাল ফল
ফুলে প্রাণে জাগে মায়া।
আলো ছায়ার লহর খেলে
যায় কাঁচা পাতার ফাঁকে,
সূর্যের জ্যোতি লুকোচুরি করে
আকাশ ছাওয়া মেঘের বাঁকে।
গাঙের তটে গ্রীষ্ম কালে
জেগে ওঠে বালুর চর,
সন্ধ্যা নামলে ফিরে আসে
সুবাস ভরা কুঞ্জে খেচর।
হরিত্ গহনের কচি পত্র
দুলে হিমেল হাওয়ার সুরে,
শৃঙ্গী ঘেঁষে ঝর্ণা নামে
ঐ দেখা যায় দূরে।


রচনাকালঃ- ২৫/০৩/২০১৯

বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯

অনুতাপ


দুর্যোগ পথে, গর্জন মুখর শ্রাবণ বারি ঝরে,
কোন ক্লান্ত পথিক এসে কড়া নাড়ে কুঁড়ে ঘরে?
আশ্রয়ের আশায় করে ভিড়,
মস্তক গুঁজতে চায় নীড়,
ক্লান্ত পথিক চমকে ওঠে জলদ গর্জনের ডরে।

মিথ্যে আশা জাগিয়ে নিত্য দিয়েছি কত ফাঁকি!
লজ্জায় নত করি শির লুকিয়ে ফিরি আঁখি;
আজ ব্যাথা জাগে প্রাণে!
হয়ত ঠকিয়েছি অন্তর জানে,
কথা দিয়ে রাখিনি কথা পড়ে রয়েছে বাকী।

পথের ধারে বসে কাঁপছিল রমণী প্রখর শীতে,
চেয়েছিলাম অগতির হাতে একখানি কম্বল দিতে।
দিতে পারিনি দিব বলে,
আমায় না পেয়ে সে গিয়েছিল চলে,
বাদল দিনে সেই দৃশ্য আবার ভেসে ওঠে চিতে।

রোগীকে ঔষধ কিনে দিব বলে গিয়েছিলাম ভুলে-
রাতে কত তার কষ্ট হল, কি হবে সে কথা তুলে!
দ্যুলকে শুনি ডাক তার,
অনুতাপে মরি বার বার,
হাতজোড় করি, তবু ক্ষমা পাব না কোন কূলে।

হাটে এক বৃদ্ধা, ঝুড়িতে নিয়ে বসেছিল ফল
কলা কিনে ছুড়ে দিলাম টাকা করে শত খল;
বাড়ি ফিরে, চিন্তায় মরি আহা
খুঁজে পেল কি না সে তাহা!
আজও সে যেন রয়েছে হাত পেতে চোখে নিয়ে জল।

এক নিরাধার জননী ডেকেছিল বৃদ্ধাশ্রমে,
যাব বলে অবশেষে যাওয়া হয়নি কোন ভ্রমে।
অর্থের লোভে পাইনি সময়,
ফিরিয়ে দিয়েছি তার অনুনয়;
আমার প্রতি তার মাত্রিত্বের ঋণ বেড়েছে ক্রমে।

সদনের আঙিনায় ভিখারি এলে গিয়েছি দূরে চলে,
ধিক্কার দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছি কোথায় কু-কথা বলে!
কোথায় ব্যাথা পেল দেখিনি কখনো,
জীবনের অঙ্কটা মিলেনি এখনো;
স্বচ্ছ্ব মন কালো হয়েছে দূষিত ডোবার শতদলে।

পথের শেষে পরিচয় হল এমন এক বাস্তবতার সনে,
কথা দিয়ে রাখিনি কথা ক্লেশ জমেছে মনে!
নয়ন সম্মুখে ভেসে ওঠে স্মৃতি,
ভুলে গেছি যেন সকল প্রীতি;
হায়, এ অনুতাপের দহনে পুড়ছি ক্ষণে ক্ষণে।


রচনাকালঃ- ২১/০৩/২০১৯

মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৯

মিছিলের মুখ


সেদিনের মিছিলে দেখেছি একটি মুখ,
মুষ্ঠিবদ্ধ শক্ত হাত আকাশের দিকে
শিরের কেশ শিখার বাতাসে কম্পমান,
জনগণের ভিড়ের মধ্যে মিশে গেলেও
সূর্যের মত জ্বলে ওঠে মিছিলের সেই মুখ।

কিছুক্ষণ পরে সভা শেষ হতেই-
ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় জনতার ভিড়,
সকলের হাত নেমে আসে মাটির দিকে।
প্রবল কোলাহলে মানুষের পায়ে পায়ে
কোথায় যেন হারিয়ে যায় মিছিলের সেই মুখ!
কোথাও ভিড় দেখলে থমকে দাঁড়ায়;
যদি খুঁজে পাই হারানো মুখ।

ভিন্ন ভিন্ন মুখোশের আড়ালে মানুষ!
নেই স্বচ্ছ্ব মনে প্রতিবাদের ক্ষমতা,
তাদের হাত উঠে থাকেনা আকাশের দিকে
ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ সমুদ্রে জ্বলে ওঠে না সূর্যের মত তাদের মুখ,
বারংবার আমাকে টেনে নিয়ে যায়
সমুদ্রের স্বপ্নের মত মিছিলের সেই মুখ।

অর্থ প্রাচুর্যের লোভে অন্য সব মুখগুলো
বিকৃত মিথ্যে দিয়ে সত্যকে চেপে রাখে,
নিজের অপরাধ লুকাবার জন্যে
অন্যের মস্তকে চাপিয়ে দেয়া দোষ!
পচা লাশের দুর্গন্ধ ওড়াতে লাগায় সুগন্ধি আতর!
তখন চুপ থাকা ওই প্রতিবাদী মুখ
ধারালো তরবারির মত গর্জে উঠে আমাকে জাগায়!

অন্ধকারে সবার হাতের তালুতে গুঁজে দিই
একটি করে নিষিদ্ধ ইস্তাহার,
ডাক দিই দাসত্বের শিকল ছিড়ে
ফাটল ধরা দেয়াল ভেঙে দিবার জন্য;
যাতে নবরূপে জেগে ওঠে মিছিলের সেই মুখ;
তবেই হবে এই দেশ শৃঙ্খলমুক্ত।


রচনাকালঃ- ১৯/০৩/২০১৯

রবিবার, ১০ মার্চ, ২০১৯

১৯৮৮ সাল


সেদিন ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিল রাজনৈতিক মহল,
তখনো বুঝিনি ওদের অকরুণ খেলা।

নামাজের উদ্দেশ্যে গমন করেছিলাম কাটরা মসজিদে
ভাবিনি এমন নিসংশ হত্যার মুখে পড়ব,
হটাৎ দেখি, এ কি? আচমকা রক্তের খেলায় উঠল মেতে"
ঐ রক্ত পিপাশু দানবের দল গুলি, তির, বল্লম, হাসুয়ার
আঘাতে আমাদের দেহকে করেছিল ক্ষত-বিক্ষত!
সেদিন শহরের রাজপথে ঢেলেছিলাম তাজা লহু!
হিংস্রো বাঘের মত আমাদের লাশগুলো
টেনে হিচড়ে করেছিল বীভৎস;
ওরা পশু, নেড়ে কুকুর, পিশাচের দল।

আমাদের অপরাধ কি ছিল সেদিন?
আমরা মুসলমান তাই?
কেন সেদিন বাধা দেওয়া হয়েছিল
কেন গণহত্যা করা হয়েছিল আমাদের!
সেদিন পুলিশ ছিল নীরব
আমাদের চিৎকারে কেউ ছুটে আসেনি,
স্টেসনের প্লাটফর্মের রক্ত চেটে চেটে খেয়েছে
অগণিত শেয়াল, হায়না, আর নেড়ে কুকুর"
রাতের অন্ধকারের আশ্রয় নিয়ে অতি গোপনে
আমাদের লাশ পুঁতেছিল কাটি গঙ্গার তীরে।

আজ ৩১ বছর পর -
চাষীদের কোদালের আঘাতে নবরূপে জেগেছি আমি।
আমার মৃতদেহের কঙ্কালে নেই মাংসের কোন নিদর্শন
আছে শুধু মাথার খুলি আর বুকের হাড়,
ধীরে-ধীরে জমে গেল বহু মানুষ
ছুটে এল আমার ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা!
কঙ্কালের দিকে সে চেয়ে রইলো নিথর দৃষ্টিতে।

আমি ভাবলাম -
হয়ত ওদের মত কোন দানব হাতে হাসুয়া নিয়ে বলবে,
ছুড়ে ফেলে দে ঐ কঙ্কাল নদীর জলে!
কিন্তু এ কি?
কোন এক চাষী ভাই করুণার স্বরে বলে উঠল
আহা-রে! মানুষটা কে না-জানি কত কষ্ট দিয়ে
মেরে এখানে পুঁতে রেখেছে; ইস!

আজ কারো মনে নেই সেদিনের ইতিহাস
ভুলে গেছে সবকিছু সমাজ ও দেশ।
৩১ বছর পরেও আমি ভুলিনি ঐ দুর্বিষহ পরিণতির কথা
ভুলিনি সেদিনের লহুমাখা আমাদের মৃত্যুকে!
আজও মেলেনি আদালতের দ্বারে সুবিচার,
আছি প্রতীক্ষায় রত আমার অতৃপ্ত আত্মা নিয়ে"
সেই দিনের; যেদিন প্রকাশ্যে আসবে ১৯৮৮ সালের হত্যাকাণ্ড।


রচনাকালঃ- ১০/০৩/২০১৯

বুধবার, ৬ মার্চ, ২০১৯

সন্ত্রাস মুক্ত শান্তির প্রতীক্ষা


রণক্ষেত্রের অনল ছড়িয়ে পড়ল দিগন্ত থেক দিগন্তে,
কী হবে আর ভীরুর মত বেঁচে থেকে?
কতদিন এভাবে প্রাণ দিতে হবে আর
ভারতীয় সীমান্তে থাকা সেনাদের?
শত-শত প্রাণ বলির দুঃখ প্রকাশ করবে
দুই মিনিট নীরবতা পালন করে?
ওপারের শত্রুদের প্রশ্রয় দিবে কতদিন?
থেমে যাওয়া তোমাদের সঙ্কল্প আর আত্মবিশ্বাস,
লুপ্ত মনবলের আঘাতে ক্ষীণ হতে থাকবে কতকাল?
রাজনীতির দেওয়া শান্তনা পুরস্কারে তুষ্ট হয়ে
কতক্ষণ ভুলে থাকবে বীর সৈনিকদের বলিদানকে?
কতক্ষণ প্রতীক্ষায় থাকবে সঠিক সময়ের?
কত সন্তান হারাল তার পিতা!
কত মা'য়ের কোল হল শূন্য!
কত স্ত্রী সজ্জিত হয়েছে বিধবার বেশে!
নাও ভারতীয় সেনাদের প্রাণ বলির প্রতিশোধ,
দেশ থেকে উপড়ে ফেল সন্ত্রাসবাদের শিকড়।
চল, মানব হত্যাকারী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে
সশস্ত্র অভিযান চলিয়ে দমন করি ওদের অস্তিত্ব,
উদিত হোক আগামী প্রভাতে নব সূর্যের আলো।
আতঙ্কের ভয় মুছে গিয়ে গজিয়ে উঠুক
শান্তির বৃক্ষ সকলের ঘরে-ঘরে।


রচনাকালঃ- ০৬/০৩/২০১৯