সার্চ করুন

সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭

চালাও অভিযান

হাতে হাত রেখে সবাই এগিয়ে চলো
অর্জন করো শক্তি,
দৃঢ় সংকল্পে তোমরা লড়াই করলে
খুঁজে পাবে মুক্তি!

আনো চাণক্যের নীতি আদিধীরার বলিদান
চন্দ্রগুপ্তের মতো শিকার,
অশোকের মতো সাহসী যোদ্ধা হয়ে
ছিনিয়ে নাও অধিকার!

তোমরা মুক্ত চির মুক্ত নও কারো কৃতদাস
ভেদাভেদে মানবেনা হার,
ধর্মের যাঁতাকলে পিষে মারা শয়তানদের
তোমরা করো মিসমার!

নেতাদের তরে গোলামী করতে
তোমরা আসোনি এই পৃথিবীতে,
দরিদ্রের সম্মুখে বাধা-বিপত্তি
ধনীদের ঘরে অঢেল সম্পত্যি;
সমাজের বুকে পীড়িত মানুষদের
আজ করতে হবে উদ্ধার।


রচনাকালঃ- ২২/১০/২০১৮

রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৭

নীল জ্যোৎস্না

জেগেছি ক্ষপায় নিদ্রাহীন নয়নে
চন্দ্রমার নীলে মিশেছে শতদল,
অতিক্রম করে সেই দুরূহ বর্ত্ম
ভেসেছি নীল সিন্ধুর মাঝে।

তোমার শীতল কিরণের স্পর্শে
হয়েছি যেন এক মাতাল ভ্রমর!
নিয়তির গড়া বন্ধ প্রাচীর ভেঙে
পার করেছি ওই উচু শৃঙ্গী।

তুফানি পারাবারে দেখেছি তোমায়
শুনেছি করুণ কণ্ঠে কান্নার সুর!
ছিলে তুমি সহস্র হায়ন বন্দি
আর এখন একফালি মুক্ত নিশ্বাস।

আমার চূর্ণ বিচূর্ণ চিত্তের গভীরে
বারে বারে দেখতে পাই তোমায়!
বিজন কুঞ্জের মাঝে ছিলে একাকী
বিধুর প্রভায় ভেজা অঙ্গ নিয়ে।

তুমি নীলাদ্র প্রাণের রক্তিম মাধবী
দাঁড়িয়ে আছো প্রাচীন কাল থেকে,
এখনও রক্তান্বেষী দানব আসে
প্রতি নিশিতে স্থৈয্র্যের বুক চিরে!

প্রলয়ের পথ ধরে দল বেঁধে
নির্মম ভাবে হত্যা করে যাই!
অনলে পুড়িয়ে দাহ করে অস্তিত্ব
তীক্ষ্ণ দাঁতে দংশায় গহনের লতা!

দিশাহীন অতীত এখনও ভাসে
তাদের লাল বর্ণের শোণিত মুখে!
অনেক দিন পর দেখেছি তোমায়
বিনীদ্র রজনীর জ্যোৎস্নার নীলে।

সময়ে সভ্যতার ইমারত ভাঙে
তবু তোমার শরীর মৃগাঙ্ক মাখে,
প্রাণ বলির রূধিরে স্নাত তুমি
তবু আছো একিরকম নীরব নিভৃত!



রচনাকালঃ- ৩০/০৭/২০১৭

শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৭

অনুভূতি

যখন আমি হারিয়ে যাব, বেদনার বৃষ্টি ঝরবে,
অস্পষ্ট হবে দৃষ্টি তোমার অশ্রু ঘিরে ধরবে-
বেদনার বৃষ্টি ঝরবে!
আমার ছবি সামনে রেখে
অধীর আগ্রহে যাবে দেখে,
চিত্তের সাগর করবে টলমল
দুনয়ন থেকে ঝরবে জল!
নীরবে রোদন করবে-
বেদনার বৃষ্টি ঝরবে!

আঁধার রাতে আমার স্মৃতি, চোখের সামনে ভাসবে,
সেই চেনা মুখটি দেখে নিথর হয়ে থাকবে-
চোখের সামনে ভাসবে!
মনে করবে আমি আছি
তোমার হৃদয়ের কাছাকাছি,
ঘুম ভাঙলে দেখবে যখন
পাশে নেই আমি তখন!
দুঃখে ভেঙে পড়বে-
বেদনার বৃষ্টি ঝরবে!

শূন্য মনে একলা বসে, হবে চিন্তায় মগ্ন,
লাল কাঁচের চুড়ি ভেঙে দুহাত করবে নগ্ন-
হবে চিন্তায় মগ্ন!
অস্থির অন্তর করবে আকুতি
জাগবে তখন কত অনুভূতি,
দাওনি প্রেম করেছ ছল
তখন পাবে তার প্রতিফল!
কম্পনে হৃৎপিণ্ড নড়বে-
বেদনার বৃষ্টি ঝরবে!

আবার বসন্তের আগমন হলে, দৃশ্য নেত্রে ফুটবে,
বিচলিত হবে মন তোমার গোরস্থানের দিকে ছুটবে-
দৃশ্য নেত্রে ফুটবে!
বাঁশপাতা ছড়ানো কবর খানি
লুটিয়ে পড়বে দিয়ে হাতছানি,
কাঁদবে তখন চিরতরে হারিয়ে
ডাকবে আমায় দুহাত বাড়িয়ে!
তিলে তিলে মরবে-
বেদনার বৃষ্টি ঝরবে!



রচনাকালঃ- ২৯/০৭/২০১৭

শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭

পতিত কাঁদে

সাধারণ জনগণ যাপন করে আগাছা বস্তিতে
তাদের ললাটের ভাগ্যরেখা রয়ে গেল পতিত,
ক্ষণে ক্ষণে যেন মরে তীব্র ক্ষুধার জ্বালায়!
ধনীদের নিত্য দিন কাটে উচুতলায় স্ফুর্তির সঙ্গে।
থেকে গেল সদা অসহায়ের দুঃখের স্তূপ!
তাই তো অক্ষম হয়ে আছে বিকলাঙ্গ দূটি চরণ,
সমাজে ভোগবিলাসে জীবন কাটায় মালদার
তবুও মন থেকে মেনে নেয় না দরিদ্র ভিক্ষুকদের!
বহু কষ্টের মধ্যে গড়ে ওঠে গরিবের সংসার
কিন্তু তাদেরো যে দরকার তিল পরিমাণ সুখ,
বেনামী কেদারার লোভে মত্ত হয়ে ওঠে সবাই
তাই তো সমৃদ্ধরা সমাজের বুকে হয় দেবতা!
নিষ্ঠুর অনাচারে ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে দেশের প্রজা
ভুখের পীড়নে শহর নগরে ছড়াই নীরবতা!
দূষণের যুগে শোনা যাই পতিতদের কান্না!
সুখ হারা কামনায় বাঁচে উমদার গোলাম হয়ে।
ঘৃণা লাজ মুছে ফেলে, যে যখন বসে ঐ গদিতে
তখন জঠরাগ্নির জ্বালায় কাতর হয় রাজপথ!
কেড়ে নেয় অসহায় পতিতদের মৌলিক অধিকার
চারিধারে শুরু হয় হরতাল-দাঙ্গা বোমাবাজি!
দেশের সংবিধান ভঙ্গ হয় অক্ষের কাঠগড়ায়
প্রতি ক্ষণে পতিতদের উপর করে অবমাননা!
ফন্দিপূর্ণ ছলনায় নয়নে পরেছে কালো কাঁচ
তাই তো আইন স্তব্ধ দেখেও দ্যাখে না কিছুই।
ছল-কপট করে ধরে এনে, নির্দোষ কে দেয় সাজা!
এমনি করেই কানুন সর্বহারাদের করে বিদ্রুপ,
ইনামের লোভে অন্ধ সেজে থাকে বিধানের আঁখি
সারণীর তলাই আরাধনা চলে ঘুষ পূজার।


রচনাকালঃ- ২৮/০৭/২০১৭

বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭

সুকান্তের প্রতি

আমার অনুপ্রেরণার প্রথম ধাপ এবং আমার প্রিয় কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, এই কবিতাটি আমি তাঁকে উৎসর্গ করলাম।
--------------------------------------


দুঃখীনি জননীর কোলে জন্ম
নিয়ে ভুবনের বুকে তুমি এলে,
পরাধীন দেশে বিদ্রোহী কন্ঠে
মানব সমাজের জাগরণ ঘটালে।
অসীম জ্ঞান শিক্ষার অধিকারী
তুমি ছিলে গনমানুষের কবি,
তুলে ধরেছো অসহায়-জর্জর
মানুষের সুখ দুঃখের ছবি।
তোমার লেখা সব কবিতা
পেয়েছে দেখ কত উচ্চস্থান,
যাবতীয় শোষণ বঞ্চনার বিপক্ষে
তোমার ছিল দৃঢ় অবস্থান।
সে যুগের কিশোর কবি হয়ে
এসেছিলে তুমি ওগো সুকান্ত,
আমার হৃদয়ে বন্দী রেখেছি
তোমার প্রতি ভালবাসা অফুরন্ত।
তোমার কাছে থেকে পেয়েছি
অনেক জ্ঞান আর অনুপ্রেরণা,
পেয়েছি আমি কিশোর বয়সে
কবিতা লেখার এমন ভাবনা।
জীবনের দুরহ পথের সঙ্গী
বিরহ থাকে অটুট মিত্র!
শত রূপে শতবার আমার
অন্তরে এঁকেছি তোমার চিত্র।
কবিতা লিখেছো ছন্দের তালে
যেন নিশি পূর্ণিমার সুধাকর,
দেখিয়েছো মানব জাতিকে সঠিক
পথের দিশা হয়ে দিবাকর।
তোমার কবিতা বাংলার বুকে
সাহসী করে প্রতিটি স্তরে,
চলব আমি আগামী দিনে
কঠিন পথ অবলম্বন করে।
সবুজ মর্তের মৃত্তিকা চিরে
তারুণ্যের শক্তি দিয়ে লড়বো!
আগমন ঘটবে শুভ দিনের
আগামীতে সুন্দর বাংলা গড়বো।
দেখবে জাতি কলমের ক্ষমতা
তুলব কবিতায় প্রতিবাদী সুর!
থাকবে না আর দুঃখ কোনই
শ্রেণী ভেদাভেদ করবো দূর!
হব আমি বাংলার বীর সৈনিক
লড়াকু ভুমিকায় হব উন্মাদ!
রেহাই পাবে না দানবের দল
জালিমের বিরুদ্ধে করবো প্রতিবাদ!
ধরেছি যখন হাতে কলম
দুঃখীদের স্বার্থে কবিতা লিখব,
করেছি যখন প্রাণেে প্রতিজ্ঞা
মানব চেতনার জাগরণ ঘটাব।
বিরহ জীবনের আট প্রহরে
দেখতে পাই তোমার উপস্থিতি!
নিঃসঙ্গ রাতে নয়নে ভেসে
প্রতিক্ষণে যেন থাকো যথারীতি।
আজও এই দেশের মাটিতে
ক্ষুধিত দিন সাম্রাজ্য গড়ে!
মানব প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত হয়
সেই ভয়াবহ মৃত্যুর কবলে!
খড়ের তৈরি ছোট্ট কুটীরে
এখনও করি আমি বসবাস,
অঙ্গের প্রতিটি শিরায় শিরায়
দ্রুত ছড়াই বিষাক্ত দীর্ঘশ্বাস!
এই অবহেলিত সমাজের মাঝে
আমি হলাম দুঃখের কবি!
প্রত্যহ রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি
ভয়ংকর মৃত্যুর সুস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি!


রচনাকালঃ- ২৬/০৭/২০১৭

শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭

অম্বিকা

সেই কবে শিশু কালে হাসতে দেখেছি মা-কে
শত দুঃখ পীড়নের কথা তিনি বুঝতে দেননি!
কখনও খেলতে গিয়ে কোন আঘাত পেলে
দেখেছি ওই হৃদয়ে কত মমতাময়ী আকুলতা।
আড়াল থেকে লুকিয়ে চুপি চুপি চেয়ে দেখেছি
বিছানায় শুয়ে আঁচল দিয়ে মুছতে চোখের জল!
দেখেছি তাঁর হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা
বেদনার আড়ালে সহস্র মমতার পরশ।
সন্তানের প্রতি জননীর ভালবাসা বুঝি এমনই
ধরণী লিখে দিলেও তুলনা হবে না এমন মাতার,
হে করুণাময়ী, হে আমার প্রাণের প্রিয় অম্বিকা-
কী করে শোধ করি আপনার মাতৃত্বের ঋণ।


রচনাকালঃ- ২০/০৭/২০১৭

মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০১৭

আক্রোশ

মানব সভ্যতার চিত্র জ্বলে ওঠে সন্ত্রস বাদের অনলে
অর্থ প্রাচুর্যের লোভে হারিয়ে ফেলে নিজেদের বিবেক,
বর্ধনাঙ্কের প্রমাদে মানুষ মানুষের হয়ে ওঠে দ্বিষৎ
অথচ জাহানে কেউই বেঁচে থাকবে না নিত্যতা।
জানিনা তবুও কেন হানাহানির খেলায় মাতে
কৃষ্ণাভ নক্তে বিবশ নর-নারীর শোণিতে করে স্নান!
অথচ ধারণ করে সমাজের বুকে নিষ্পাপ শিশুর প্রতিরূপ
অনৈতিক কার্য ঘটায় রিষের বেশে অথবা আক্রোশে!
ধবল নির্মোক বাবুদের সাথে সড়যন্ত্রের জাল বুনে
তারা একদিন দিয়েছে যাদের প্রতি মিথ্যে গ্লানি!
তাঁরাই প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন করেছে দেশ
স্বাধীনতা দিয়েছে আমাদের গর্বের সাথে বাঁচার।
এখনও গৃহ বন্দীর মধ্যে সড়যন্ত্র হয় প্রাবল্যের লোভে
অনুবলের দাপটে কত মানুষের উর্ধ্বে করে নির্যাতন!
তাদের বিরুদ্ধে কখনও যদি কেউ করে প্রতিবাদ
নিতে হয় প্রবঁচকের ফাঁদে পড়ে মিথ্যে কদুক্তি।
অবশেষে সেই নিরোধক মানব করে নিপাত বরণ
এভাবেই খেলে তারা বিকৃত অক্ষের ক্রীড়া!
অগণিত শবের উপর অধমাঙ্গ রেখে এগিয়ে চলে
রূধির স্রোতে ভেসে চলে কূটনীতির কল্পী তরী!
এ চিত্র দেখে মনে হয় যেন চির অভিশপ্ত দানব
যারা অবিরত নির্দ্বিধায় নিরবলম্ব মানুষকে করে খুন!
হনন করে নর নারী শিশু বৃদ্ধ সহ বিশ্ব মানবতার
অথচ বিশ্ব বিবেক নির্বাক হয়ে দেখে শুধু রঙ্গ!
দেশের বুকে মানুষের দিন কাটে পঁচত্বের বিলম্বে
চাহনির অগোচরে ঘুরে বেড়াই কত হিংস্র পশু!
তবুও তারা আইনের চোখে জঙ্গী নয় সন্ত্রাসী নয়
অহা সবাই বলে তারা নাকি সততার প্রতীক!


রচনাকালঃ-১৮/০৭/২০১৭

রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭

রঙবাহারি শীত

নিশির ঝরা শিশির হাসে
ওই সবুজ ধানের শীষে,
মৃদু রোদের পরশ মেখে
হিমেল বায়ু যায় মিশে।

শিশির বৃষ্টির প্রতিটি কণা
প্রান্তের সবুজ ঘাসে ঝরে,
ধারণ করে মুক্তার রূপ
দেখে হৃদয় পাগল করে।

চারিদিকে বহে শীতল অনিল
উন্মাদ অঙ্গে জাগায় শিহরণ,
সর্ষের ক্ষেতে ছুটে এসে
ভ্রমর করে মধু আহরণ।

গ্রামের কৃষক মাঠে যায়
দূর্বা ঘাস মাড়িয়ে ভোরে,
ঠান্ডা খেজুর রস নিয়ে
আসে ঘন কুয়াশার ঘোরে।

তৈরি হয় খেজুর গুড়
আর কেউ বানায় পিঠা,
নতুন খেজুর গুড়ের পাটালি
খেতে বড়ই লাগে মিঠা।

প্রতি বছর পৌষ মাস
যেন নিয়মিত আসে ফিরে,
হাড় কাঁপানো শীত পড়ে
কুয়াশা রাখে ধরাকে ঘিরে।

উড়ে এসে রঙিন প্রজাপতি
ডানা মেলে বসে গাঁদা ফুলে,
হিমেল পবনে ডালিয়ার সুবাস
প্রকৃতির রূপ ধরে তুলে।

ঘন বিপিণে শকুন্তের ঝাঁক
গেয়ে যায় সুমধুর গীত,
প্রতি ক্ষণে বহে গন্ধবহ
মনে হয় রঙবাহারি শীত।


রচনাকালঃ- ১৬/০৭/২০১৭

হারানো স্মৃতি

এই গোলকধাঁধা বিষন্ন ভুবনে দেখি মিথ্যে স্বপ্ন
তাকে আঁকড়ে ধরে আছে কিছু অজানা কামনা,
বেঁচে থাকার জন্য নেই আমার কোন আশ্রয়
প্রতিক্ষণে ক্লান্ত কলেবর নিয়ে খুঁজি অন্তহিত ঠিকানা!
পরিচয়হীন ভাবে জীবন কাটানো যে বড় কষ্টের
তাই জনগণের দলের মাঝে খুঁজে ফিরি গন্তব্য!
কে আমি? আসলে কী আমার ধ্রুব পরিচয়?
কাকে খুঁজে ফিরি ব্যস্ত মানবের ভীড়ের মাঝে!

জানিনা কেন মনে পড়ে না আগের কাটানো দিনগুলি
যেন মস্তিষ্ক থেকে মুছে গেছে জমে থাকা স্মৃতি,
শুধু মনে পড়ে একটি ভয়ংকর পথ দুর্বিপাক
তারপর নিজেকে দেখতে পাই হাসপাতালের বেডে!
ডাক্তার বলে আমি নাকি হারিয়ে ফেলেছি স্মৃতিশক্তি
তখন কাঁচ ভাঙার মত হৃদয় ফেটে হয় চুরমার!
কে আমি? তাহলে আজ কোথায় আমার অভিজন?
কাকে খুঁজে ফিরি এই অচেনা শহরে ভীড়ের মাঝে!

এখন বিষধর ভুজঙ্গের মত দংশন করে প্রতি চকিত
যেন চব্বিশ বছর বয়সী নব তরুণের উদ্ভব হলো,
দিনের শেষে ক্লান্ত দেহ নিয়ে ফিরে আসি
চপলার কিরণে উদ্ভাসিত সেই পথের ফুটপাতে।
অনিদ্রা নয়নে জেগে থাকি অস্তিত্বের প্রত্যাশায়
রজনীর দ্যুলকে চেয়ে দেখি চন্দ্র তারার খেলা,
কে আমি? কী করে ফিরে পাব সেই হারানো স্মৃতি
কাকে খুঁজে ফিরি একাকী নির্জন ত্রিযামার মাঝে!

ক্ষত বিক্ষত অঙ্গ নিয়ে কল্পনায় কত ছবি আঁকি
হয়তো শিশুকালে পেয়েছি জননীর মমতাময়ী আদর,
বড় হয়েছি পিতার স্নেহ আর অফুরন্ত ভালবাসা নিয়ে
হয়তো তারাও আমাকে একিভাবে প্রতিক্ষণে খোঁজে।
আজও শুনতে পাই প্রতীক্ষায় রত প্রেয়সীর ডাক
জানিনা আবার কবে ফিরে পাব হারানো স্মৃতি!
কে আমি? কোথায় গেলে খুঁজে পাব লুপ্ত অস্তিত্ব?
কাকে খুঁজে ফিরি নীরব মনে দিশাহীন পথের মাঝে!


রচনাকালঃ- ১৫/০৭/২০১৭

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭

তুমি আর আমি

তুমি উত্তাল গভীর অম্বুধি
আমি হতে চায় তার নদী,
বিরাম হীন নীরের স্রোতে
অবিরত বইবো নিরবধি।

তুমি প্রকৃতির সৃষ্টি মহীধর
আমি হতে চায় তার ঝর্ণা,
সব বেদনা ধুয়ে মুছে দেবো 
ফিরিয়ে আনবো সুখের বন্যা।

তুমি গোধূলি লগ্নের অভ্র
আমি হতে চায় তার নীল,
অঙ্গে মিশে রবো এভাবে
থাকবে মোদের অনন্ত মিল।

তুমি শ্রাবণ বর্ষার জলমুক্
আমি হতে চায় তার বৃষ্টি,
শ্রাবণের বারিধারায় বর্ষিত হয়ে
করবো কিছু অনুভূতির সৃষ্টি।

তুমি এই গ্রামের ঝিল
আমি হতে চায় তার শতদল,
সকল কবি মোদের নিয়ে
কবিতা লিখে যাবে অবিরল।

তুমি যখন গাইবে গান
আমি হতে চায় তার সুর,
কোকিলের কন্ঠে সুরের বর্ষণ
যেমন শুনতে লাগে সুমধুর।

তুমি ওই খগোলের শশাঙ্ক
আমি হতে চায় তার তারা,
চাঁদনী দীপ্তির পরশ পেয়ে
তামসী হয়ে যাবে দিশেহারা।

তুমি প্রগাঢ় কালো রজনী
আমি হতে চায় তার স্বপ্ন,
হৃদয়ের নিবিড়ে লুকনো প্রেমকে
আজীবন করে যাব যত্ন।

তুমি প্রবাহ তরঙ্গিনীর ঊর্মি
আমি হতে চায় তার কূল,
আমার কাছে আসবে ছুটে
কখনো হবে না তাতে ভুল।

তুমি বসন্ত ঋতুর পুষ্প
আমি হতে চায় তার সুবাস,
দুজন মিলে প্রণয়ের আবেগে
গড়ে তুলবো সুখের নিবাস।


রচনাকালঃ- ১২/০৭/২০১৭

দুর্নীতিবাজ

মোদের দেশের নেতা মন্ত্রী দেখায় কত দাপট
অবাদে দুর্নীতি চালিয়ে যায় করে ছল কপট,
এম-পি মন্ত্রী হয় তারা পেয়ে জনতার সম্মতি
শৈরাচারী শাসনের ফলে হয় দেশের দুর্গতি।
স্বাধীনতার সত্তর বছর পরেও উন্নয়ন নেই দেশে
দরিদ্র মানুষের টাকা লুটে পাচার করে বিদেশে,
মনোবল শক্ত করে নেতা নেত্রীরা হয় সঙ্গবদ্ধ
তীব্র প্রতিবাদ সৃষ্টি করবো মোরা হয়ে জোটবদ্ধ।
কিছু রাজনীতিবিদ লুকিয়ে আছে পন্ডিত শিয়াল
নির্দ্বিধায় তারা সৃষ্টি করে দুর্নীতির বেড়াজাল,
মানুষের রক্ত শোষণ করে হয় রাজনৈতিক নেতা
এত সহজে যায় কী জনগণের মন জেতা?
সাদা রঙ শান্তির প্রতীক সেটা তারা বোঝে না
সাদা বস্ত্র পরিধান করে ভারতীয় সংবিধান মানে না,
আইন ব্যাবস্থাকে প্রতি মুহূর্তে লাগাই নিজেদের কাজে
পুলিশের ঘেরাটোপে দুর্নীতি করে এসব কী সাজে?
মানুষ আইনের দ্বারস্থ হয় মেলেনা সঠিক বিচার
দেশের ভক্ষক রক্ষাকর্তারা নির্দ্বিধায় চালাই অত্যাচার!
ভোগবিলাসী মন্ত্রীরা ঘুরে বেড়ায় এ-সি কারে
দরিদ্র জনগণ ভিখারির মত যায় সবার দ্বারে!
অসহায় মানুষের চিন্তাধারা নেই তাদের মাথায়
কবে উঠবে মোদের মান বি-পি-এলের পাতায়?
বেকার যুবক আছে কত কাজের আশায় মরে
দিন ফুরালেও হাঁড়ি চড়েনা দরিদ্রদের ঘরে!
কত মানুষ আছে অবহেলিত তাদের কথা কী ভাবে
পাঁচ বছর হলে পরেই আবার ভোট চাইতে যাবে,
সহজ সরল জনগণকে দেয় মিথ্যা প্রতিশ্রুতি
ভোট পেরলেই সব ভুলে যায় হয়না অনুভূতি।
ভুলে যায় কেন তারা জনগণ তাদের ভগবান
ভোটের মোহর লাগিয়ে বাড়িয়ে দেয় মান,
সব সুব্যাবস্থা দেয় সরকার তবুও খায় ঘুষ
দেশ ও জাতির শত্রু হয় কেন ফিরেনা তাদের হুশ।
মনুষত্ব জ্ঞান বিবেক বলে থাকতো যদি কিছু
দেশ সেবক হয়েও তারা ছুটতো না দুর্নীতির পিছু,
আর কতকাল চলবে এভাবে অনুশোচনা জাগবে কবে
দেশ ও সমাজ ধ্বংসের মুখে পতিত হবে তবে?
ফেরাব এই দেশের মাটিতে মানুষের হারানো শান্তি
প্রয়োজন হলে আনবো মোরা বিদ্রোহের ক্রান্তি!
দেশের দূরাবস্থা দেখে কাঁদি এ কেমন নীরবতা
কবে পাব দেশ প্রেমিক সুভাষ চন্দ্রের মত নেতা।


রচনাকালঃ- ১১/০৭/২০১৩

আষাঢ়ের প্রেম

ঐ নীল গগনে ছেয়েছে কালিমাখা তায়দে আঁধার
উষ্ম পবন এসে বলে যায় এসেছে আষাঢ় মাস,
বাদল দিনে তটিনীর পাড় একাকী বসে থাকি
বাড়িয়ে দিয়ে তোমার তরে শূন্য দুটি ভুজ।
অভ্রের দিকে চেয়ে দেখি বৃষ্টি নামে মুষলধারায়
অম্বুর প্রতিটি কণায় দেখি শুধু তোমার প্রতিবিম্ব,
ঐ পাদপের প্রতিটি শাখায় ফুটেছে কদম ফুল
চারিদিকে ছড়িয়েছে মন মুগ্ধকর মিষ্টি সুবাস।
উল্লাসিত অঙ্গ বৃষ্টির পরশ মেখে ভিজতে থাকে
বিচলিত মনে অনুভব করি তোমার উপস্থিতি,
ক্ষণে ক্ষণে থেমে যায় বৃষ্টি দেখি রোদেলা গোধূলি
কখনো উদাস হয়োনা যেন এমন মধুর লগ্নে।
অবনীর বুক চিরে আসবো সুখের পরশ নিয়ে
সবুজ কুঞ্জের মাঝে হাতে হাত রেখে বৃষ্টিতে ভিজবো,
প্রণয়ের আবেগে দুজন মিলে মিশে হব একাকার
শীতল উদকে মোরা ভাসিয়ে দেবো ক্লান্ত দীর্ঘশ্বাস।
কাজল কালো নয়নে দেখবো একে অপরের প্রতি
বৃক্ষের মতো আঁকড়ে ধরা আবেগী প্রেমের প্রতিফলন,
আষাঢ়ের বর্ষণে খুঁজে নেব শান্তির নিবাস
অখিলের জলদ এসে করবে সুখের স্বর্গ দান।
সর্বদা প্রিতিটি নিঃশ্বাসে এভাবেই মিশে থাকবে
সারাজীবন প্রগাঢ় বন্ধনে আবদ্ধ আষাঢ়ের প্রেম,
যেমন থাকে পারাবার ঝিনুকের বুকে মুক্তা
প্রয়াস করে প্রাণপনে তাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে।


রচনাকালঃ- ১০/০৭/২০১৭

মিথ্যেবাদী ডাক্তার

ওঁরা মিথ্যেবাদী ডাক্তার!
উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে যায় ওঁরা বিদেশে
ডাক্তারি পাস করেই আবার ফিরে আসে এদেশে,
শপথ নেয় নিরপেক্ষ হয়ে মানুষের সেবা করবে
তাহলে কেন বিনা চিকিৎসায় অসহায় জনগন মরবে?

ওঁরা মিথ্যেবাদী ডাক্তার!
কত সুনামি ডিগ্রি পাই ওঁরা হয়ে এম-বি-বি-এস
আবার বিদেশ ফেরত ডাক্তার কিছু এফ-আর-সি-এস,
ভদ্রতার মুখোশ পরে ধারণ করে ডাক্তারের বেশ
অবাদে মানুেষের অর্থ লুটে ওঁরা করে সর্বশেষ৷

ওঁরা মিথ্যেবাদী ডাক্তার!
ইচ্ছে খুশি চাকরি করে হাসপাতাল আর নার্সিংহোমে
কিছু দিন পরেই দেখা যায় ওঁদের টাকার পাহাড় জমে,
হাসপাতালে রোগী দেখে না করে ফাঁকিবাজি
এমারজেন্সি ঘরে গল্প গুজোব চলে আড্ডাবাজি।

ওঁরা মিথ্যেবাদী ডাক্তার!
হাসপাতালে যাওয়ার সময় নেই ডাক্তার বড় ব্যস্ত
নিজস্ব ক্লিনিকে রোগী দেখে তাদের কোরে তোলে সুস্থ,
অসহায় মানুষ বোঝেনা কিছু কোনটি ভাল মন্দ
লুন্ঠিত হয় তার কারণে হয়ে ডাক্তারের কাছে বন্ধ।

ওঁরা মিথ্যেবাদী ডাক্তার!
মৃত্যুমুখি রোগীদের ওঁরা বাঁচিয়ে তোলে প্রাণ
তাইতো অবুঝ জনগণ ওঁদের মনে করে ভগবান,
অর্থ লোভি ডাক্তারদের টাকায় ধরে যেন ঘুন
কুমন্ত্রণার বুদ্ধি দিয়ে শেষে মানুষ করছে খুন।

ওঁরা মিথ্যেবাদি ডাক্তার!
সন্তান জন্মানোর পূর্বে মাতা হাসপাতালের বেডে করে ছটপট
সেখানেও তৈরি রাক্ষস ডাক্তার দালালি খাওয়ার জন্য চটপট,
সন্তান ভূমিষ্ট দূরের কথা সব শেষে করে ওঁরা সিজার
এভাবে কত অসহায় মায়ের জীবন করে দিলো ছারখার!

ওঁরা মিথ্যেবাদী ডাক্তার!
ভর্ত্তি থেকেও চিকিৎসা মেলেনা এইতো হাসপাতালের পরিবেশ
রক্ত পিপাশু ডাক্তারের দল ওঁরাই তো করছে সবশেষ,
ঔষধ ইনজেকসেন মেলেনা কিছুই কিনতে হয় দোকানে
দরিদ্র মানুষ ঠকছে বারবার দিতে হয় কমিশন সেখানে।

ওঁরা মিথ্যেবাদী ডাক্তার!
ক্লিনিকে পিশাচ ডাক্তার রোগী দেখে করে ছল কপট
ভাল চিকিৎসা তো দুরের কথা করতে হয় রক্ত রিপোর্ট,
কোথায় হবে পরীক্ষা নিরিক্ষা তার সন্ধানও দেয়
সহজ সরল মানুষ কে ঠকিয়ে  অর্ধেক দালালি নেয়!

ওঁরা মিথ্যেবাদী ডাক্তার!
শারিরিক অসুস্থ রোগীদের নেই ডাক্তারের কাছে মূল্য
ওঁদের কাছে আজ আমরা হয়েছি খোদ্দেরের সমতুল্য,
এযুগের ডাক্তার বড় অর্থলোভি হয়েছে ওঁরা ব্লাকমেলার
অশিক্ষিত রোগীদের সব কেড়েনিয়ে করে  সুযোগের সৎব্যবহার।

ওঁরা মিথ্যেবাদী ডাক্তার!
ঔষধ কোম্পানির কাছে খায় ডাক্তার মোটা অঙ্কের ঘুষ
ভেজাল ঔষধ লিখে তবুও ফিরছে না জনগণের হুস,
খারাপ ঔসধ খেয়ে যায় রোগী মনে করে তারা সুস্থ
রোগ নিরাময় তো দূরের কথা হয়ে পড়ে আরও অসুস্থ!

ওঁরা মিথ্যেবাদী ডাক্তার!
প্রাণ বাঁচানোর ক্ষমতা দিয়েছেন ঈশ্বর তোমাদের হাতে
অর্থের লোভে আমাদের মেরে ভাবছো কি হয়েছে তাতে?
এই নিবেদন করছি আমি ও ডাক্তার তোমাদের কাছে
সকলের সেবা করো অসুস্থ রোগী যতো আছে।


রচনাকালঃ- ০৮/০৭/২০১৭

দুঃস্বপ্নের চিত্র

গভীর রাতে উঠে শুনি চিৎকার
তখন শিহরিত হয় মোর গা,
ভয়ংকর রক্তাক্ত দেহ ধারণ করে
ছুটে আসছে এগিয়ে দুই পা!

সন্ত্রাসের কবলে গড়ে রক্তের ভেলা
তাতে যেন ভেসে যায় মাটি,
ওই দানবের দল দেখায় বাহুবল
নিশির তিমিরে তৈরি করে ঘাঁটি।

চলে দাঙ্গা ফাসাদ আর লুটপাট
নির্বিগ্নে ঝরায় তারা অগ্নির বৃষ্টি!
করুণ দৃশ্য দেখে হৃদয় কাঁপে
জেগে থাকে নিদ্রাহীন দৃষ্টি।

অসহায় নর-নারীর চিৎকার শুনি
দেখতে পাই দুঃস্বপ্নের চিত্র!
তারা মুখোশধারী অত্যাচারী
কখনো হতে পারেনা কারো মিত্র।

একদিন তাদের অস্তিত্ব ধ্বংস হবে
অন্তর থেকে করি এই অভিশাপ!
বেশী দেরি নেই আসছে সুনামী
বেড়ে গেছে বিশ্বের বুকে পাপ।


রচনাকালঃ- ০৭/০৭/২০১৭

উলঙ্গ সমাজ

মানব সভ্যতা হেঁটে চলে উলঙ্গ পথের তরে
যেখানে শুধু দেখা যায় নগ্ন ময়ূরীর নাচ,
মানুষ বাস্তব চিত্রকে ভুলে বসবাস করে
এক সাজানো মিথ্যে রঙিন স্বপ্নের দেশে।
যেখানে থাকে ধ্বংসের পিচে গড়া কালো পথ
সে পথ অতিক্রম করে পৌঁছে যায় মৃত্যুর দ্বারে!
বিষাক্ত নাগিনীর মোহজালের মধ্যে বন্দী হয়ে
তরুণ যুবক ছুটে চলে ওই পথের দিকে।

সর্ষের কুসুম পুরুষ ভ্রমর কে আহ্বান জানাই
নির্লজ্জ মধুকর ছুটে গিয়ে মধু আহরণ করে,
আর তখনি ফুটে ওঠে উলঙ্গ সমাজের চিত্র
যেখানে অধঃপতনের ধ্বংসস্তুপ ছাড়া কিছুই নেই!
প্রতি রাতে উজ্জল সুন্দরী হরিণীর বাজার বসে
সেখানে দেখা যায় মুখোশধারী মানবের সমাগম,
মহা আনন্দে আসে অগণিত নবীন তরুণ কিশোর
অবশেষে শুরু হয় টুকরো টুকরো চর্মের দরদাম!

অর্থ দিয়ে কিনে নেয় খাঁচায় বন্দী থাকা বিহঙ্গ
তারপর শুরু হয় কত আধুনিক গানের আসর,
ভন্ড পুরুষের দল পান করে বিষাক্ত মদিরা
সারা রাত ধরে নিথর অঙ্গে করে ক্রুশের আঘাত!
অথচ প্রকাশ্য দিবালোকে তারা ঘুরে বেড়ায়
আর নিজেদের দাবি করে সম্মানিত ব্যক্তি বলে,
তাই বিষাক্ত হয়ে ওঠে এই ধরণীর মৃত্তিকা
ধীরে ধীরে দূষিত হয় গভীর সমুদ্রের উদক।

উলঙ্গ সমাজকে আর সহ্য করবেনা প্রকৃতি
নিয়ে আসছে ভুবনের বুকে বিদ্রোহের মহা প্রলয়!
তান্ডব করবে সলিল আর বেশী দেরি নেই
দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে ভয়ংকর সুনামী!
হে মানব জাতি তোমরা জেগে ওঠো সাবধান হও
না হলে তচনচ করে দেবে তোমাদের অস্তিত্ব!
চিরতরে লুপ্ত হয়ে যাবে আজকের উলঙ্গ সমাজ
অবশেষে পড়ে থাকবে রক্ত-মাংস হীন কঙ্কাল।


রচনাকালঃ- ০৫/০৭/২০১৭

শীতের শিশির

আমি অনুভব করেছি রজনীর শিশির বৃষ্টির
নিদ্রাহীন স্বপ্নের মতো প্রতিটা বিন্দু ঝরে পড়ে,
স্পর্শ করেছি কুয়াশায় ভেজা হিমেল বায়ু
দেখেছি ঘন ধোঁয়ার মত পালিয়ে বেড়ায়।
ঐ নীল দ্যুলকে সাদা মেঘের আবরণে ঢেকে
কোথায় যেন বিলীন হয়ে যায় না ফেরার দেশে,
শিশির বিন্দু সারা রাত হিমের হাত ধরে ঝরে পড়ে
চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে যায় আঁধার ধরিত্রী।
আর জেগে থাকেনা কেউ এই নির্জন রাতে
প্রাত্যাশায় জেগে থাকে নিদ্রাহীন দুটি আঁখি!
জেগে থাকে শীতের প্রতিটি শিশির বিন্দু
জেগে থাকে সবুজ পাতা স্নান করার কামনায়।


রচনাকালঃ- ০৩/০৭/২০১৭

বিরহের গান


আমি চিরতরে দূরে চলে যাব
হয়তো সেখানে শান্তি খুঁজে পাব,
ক্লান্ত দুপুরে দেব বৃক্ষের ছায়া
সেদিন ব্যাকুল মনে জাগবে মায়া।
আমি মৃদু অনিল হয়ে এসে
তোমায় আলিঙ্গন করব ভালোবেসে,
সেদিন শিরের কুন্তল থাকবে দুলতে
কভু আমায় পারবেনা ভুলতে!

আমি বাদল দিনের বৃষ্টি হয়ে
ঝরে যাব তোমার হৃদয় ছুঁয়ে,
ভেজা গোলাপ হয়ে ধরব হাত
মনে পড়বে মোরে দিয়েছ আঘাত!
সেদিন পুর্বের অতীত ভেসে উঠবে
হয়তো সুকনো পাদপে রঙ্গন ফুটবে,
ছুটে যাবে ওই কুসুম তুলতে
কভু আমায় পারবেনা ভুলতে!

আমি শরতের সাদা জলদ হয়ে
শিউলির সুগন্ধ নিয়ে আসব বোয়ে,
সেদিন শেফালি পুষ্পের গাঁথবে মালা
তোমার হৃদয়ে ধরবে বড় জ্বালা!
প্রতিটি তিমির রাতে থাকবে নিঃসঙ্গ
বেদনার অশ্রু ঝরে ভিজবে অঙ্গ!
বিস্মৃত মনে ছুটবে কপাট খুলতে
কভু আমায় পারবেনা ভুলতে!

আমি বসন্ত কালের কোকিল হয়ে
শুনিয়ে যাব বিরহের গান গেয়ে,
ভিখারির মত গিয়েছি তোমার দ্বারে
ফিরিয়ে দিয়েছ মোরে বারে-বারে!
নীরবে ঝরেছে মোর আঁখির বারি
অসলে আমিতো বিরহের অধিকারী!
হয়তো পারিনি কখনো সেকথা বলতে
কভু আমায় পারবেনা ভুলতে!

আমি নীল দ্যুলকের পথ ধরে
শীতের শিশির হয়ে যাব ঝরে,
পথ চলতে গিয়ে দাঁড়াবে থমকে
মোর সমাধি দেখে উঠবে চমকে!
অস্পষ্ট হবে সেদিন আঁখির দৃষ্টি
নীরবে ঝরবে কত রোদনের বৃষ্টি!
সেদিন বেরঙিন চিত্র থাকবে ঝুলতে
কভু আমায় পারবেনা ভুলতে!


রচনাকালঃ- ০১/০৭/২০১৭

বাদল দিন


বৃষ্টির দিনে বিলে ফোটে পদ্মফুল
শিশুরা গায়ে কাদা মেখে আনন্দে নাঁচে,
মিষ্টি সুরে সঙ্গ দিতে ছুটে আসে প্রকৃতি
বৃক্ষ অঙ্গ ভেজায় ঝম-ঝম বৃষ্টির ছন্দে।
খালে বিলে আনাগোনা হয় বকের
মন মুগ্ধ হয় প্রকৃতির এমন অবদানে,
বাদল দিনে বৃষ্টির পরশ মেখে ভিজে মন
হিমেল বাতাসে অঙ্গে জাগে শিহরণ।
কালো মেঘের ভেলা ভাসে নীল আকাশে
পাখিরা খেলা করে সুদূর নীল প্রান্তে,
নদীর জল ক্ষণে-ক্ষণে ওঠে ফুলে ফেঁপে
শান্ত পৃথিবীর বুকে ঝরে বারিধারা।
গঙ্গার য্রোত যেন প্রত্যহ অবিরল বাড়ে
মাঠ পুকুর নদী নালায় জোমে যায় জল,
বৃষ্টির ছম-ছম নূপুর বাজে গাছের ডালে
সন্ধ্যাকাশে ক্ষণে-ক্ষণে সাজে রংধনু।
বাদল দিনে রঙবাহারি ফুলের আগমন
শ্যাওলা কচুরিপানায় ভরে যায় পুকুর,
সবুজ অরণ্য পুলকে ভিজে স্নান করে
বর্ষণ মুখর লগ্নে শুনি দোয়েলের গান।


রচনাকালঃ- ২৮/০৬/২০১৭

ঈদের খুশি

সন্ধ্যার অন্তরীক্ষে উদয় হল
ঐ শাওয়ালের বাঁকা চাঁদ,
আনন্দ উচ্ছ্বাসে আত্মহারা হয়ে
আজ মন হল উন্মাদ।
দীর্ঘ এক বছর প্রতীক্ষার পর
অবশেষে এল খুশির ঈদ,
ব্যাকুল মন থেমে থাকে না
দুনয়ন থেকে হারালো নিদ।
রাতের আকাশে চেয়ে দেখি
পাখিদের ডাকে হল ভোর,
ঈদের নতুন সূর্য দেখতে
খুলে দাও মনের দোর।
ধনী দরিদ্র সবার সদনে
আজ এল ঈদের খুশি,
নতুন করে ফুটলো আবার
দুঃখিদের মলিন মুখে হাসি।
খুরমা পোলাও সেমাই মিষ্টি
তৈরি হয়েছে নতুন খাবার,
প্রতি বারের মত এবারেও
ঈদ ফিরে এল আবার।
স্নান করে চোখে সুরমা দিয়ে
নতুন বস্ত্র পরিধান কর,
আতর মেখে যাও ঈদের মাঠে
রবের দরবারে হাত তুলে ধর।
ঈদের দিনে শীতল বাতাস
যায় আনন্দের দোলা দিয়ে,
ওয়াজিব নামাজ পড়তে যাও
একটু মিষ্টি খাবার খেয়ে।
অভিমান মুছে দাও মন থেকে
সব বিভেদ ভুলে যাও আজ,
ঐ মুক্ত নীল গগনের নিচে
সবাই একত্রে পড় নামাজ।
ফিতরা জাকাত পরিশোধ করে
যাও ঈদের নামাজ পড়তে,
সব গুনাহ মাফ হবে আজ
যাও নিষ্পাপ জীবন গড়তে।
আজ ভুলে যাও রাগ অনুরাগ
তোমরা কোরোনা কোন ব্যবধান,
নামাজের শেষে সালাম মুসাফা
কর সবার সাথে আলিঙ্গন।
ঈদ মুসলিম জাতির কাছে
কত খুশির পবিত্র উৎসব,
চারিদিকে শুরু হয়েছে আজ
এক সুন্দর অনুভূতির কলরব।


রচনাকালঃ- ২৫/০৬/২০১৭

বুধবার, ১২ জুলাই, ২০১৭

পথিকের প্রতি

চেয়ে দেখ,
তোমাদের সম্মুখে আছে কঠিন পথ
আসতে পারে বাধা বিঘ্ন-জ্বালা!
চলার পথে হতে পারে হৃদয় চৌচির!
লক্ষ্য ভেদ করতে তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে;
নিজ দায়িত্ব পালন করার পুর্বে
হয়ে পোড়োনা যেন দুর্বল।
চারিদিকে জ্বলছে প্রতিহিংসার অনল!
দেখা দিয়েছে আজ নবরূপে বিভেদ
বিস্তীর্ণ স্বচ্ছ নীল আকাশের মাঝে -
জমছে অশুভ কালো মেঘ,
প্রতিজ্ঞা নাও!
তোমাদের সবকিছু ঠিক করতে হবে
ব্যর্থ হলে শুরু হবে বিভ্রান্ত।
খোঁজো,
ভুবনের জমিনে মানুষের ভুল-ভ্রান্তি
অনুভব কর সকলের দুঃখ ক্ষোভ-যন্ত্রণা;
একে অন্যের সত্রু হয়ে করছে হানাহানি!
দরিদ্রদের অন্তরে রয়েছে অফুরন্ত লাঞ্ছনা!
ক্ষমতার দাপটে শুরু হয়েছে অবিচার
সব ধুয়ে মুছে দাও সমাজের বুক থেকে।
হে যুব সমাজ,
তোমরা হাতে ধর অগ্নি-মশাল
ঘুচিয়ে দাও পৃথিবীর বুক থেকে আঁধার;
সকলের দ্বারে পোঁছে দাও শান্তির বাণী
দীর্ঘ যাত্রার পথ চলতে চায় অক্লান্ত পরিশ্রম।
জীবন যুদ্ধের কঠিন পথে নেমে,
হে পথিক; তোমরা হয়ে যেয়োনা ক্লান্ত।


রচনাকালঃ- ২৪/০৬/২০১৭

মহাশূন্যের পথে পাড়ি


একদিন  তিমির ধরণীর মৃত্তিকার বুক চিরে
আলিঙ্গন করেছিলাম সূর্যের কিরণের সঙ্গে,
প্রত্যহ নিশির শেষে বিহঙ্গ ডাকা ভোরে
ছুটে গিয়ে স্পর্শ করি ভানুর জ্যোতি।
এখন আর শুনতে পাই না কোকিলের ডাক
এর মধ্যে অতিক্রম করেছি অনেক বছর,
এখোনো প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে আকাশের
লাল বর্ণের আলোয় করি সদনে ফেরার চেষ্টা।
আজ জীবনের বাস্তকব ও কঠিন পথ চলতে
সাহস আর মনোবলের যে বড়ো অভাব,
সকলের মাঝে আশ্চর্য কিছু করে যাব
রেখে যাব ভুবনের বুকে আমার কবিতা!
পথ চলতে অবশেষে যেন না পড়ে দীর্ঘশ্বাস
তারপর খুঁজে নেব চিরস্থায়ী ঠিকানা!
বিবর্ণ ক্ষিতির বুকে প্রাণহীন শরীর রেখে
আমি অনন্ত মহাশূন্যের পথে পাড়ি দেব!


রচনাকালঃ- ২৩/০৬/২০১৭

শঙ্খচিল


আমি এক মুক্ত শঙ্খচিল
বিরহ ফেরি করি অনাবিল,
খোলা আকাশে মেলি ডানা
যেথা রংধনু থাকে টানা।
পালকে ঢাকা মোর কলেবর
নেই আশ্রয় যেন যাযাবর,
দিবানিশি থাকে এত কেতন
তবু পাই না খাটুনির বেতন।
বহু শহর নগর ঘুরি
মানবের বুকে চলে ছুরি!
কারা যেন করে চিৎকার
কোথায় ওঠে এত হাহাকার!
পৃথিবীতে জমে হিংসার ভিড়
তবুও খুঁজি সুখের নীড়,
বিষন্ন থাকে যাদের মুখ
উপহার দিয়ে যায় সুখ।
বিষাক্ত হয় অন্তরীক্ষের বায়ু
প্রত্যহ কমে জনতার আয়ু,
প্রকৃতি হয় সদা দূষণ
পিশাচ করে লহু শোষণ!
ঝরে অবলার নয়নের নীর
তাই হয়ে উঠি অস্থির,
অনেক দেখেছি আর নয়
করিনা আজ কাউকেই ভয়।
আমি মুক্ত চির মুক্ত
হই ক্রান্তির দলে যুক্ত,
মোর আগমনে ঘুচবে যামিনী
আবার জন্মাবে নবরূপে অবনী।


রচনাকালঃ- ২২/০৬/২০১৭

আষাঢ়


আষাঢ় দ্যুলকে নীরদের গর্জন
একটু পরেই শুরু হবে বাদলের বর্ষণ,
ঝোড়ো সমীরণ উঠেছে পুবে
ধান ক্ষেত গুলো যাবে ডুবে!
চেয়ে দেখি নদীর ওপারের দিকে
জীমৃতে আঁধার জমছে ধীকে-ধীকে,
ওই ডাকে শোনো জলধর ঘন-ঘন
ধেনুদের সদনে ফিরিয়ে আনো।
বারে-বারে পথের দিকে দেখি চেয়ে
কৃষক ফিরছে ঝড়ের আশঙ্কা পেয়ে,
উঠেছে অনিলের সোঁ-সোঁ শব্দ
সারা গ্রাম যেন হয়ে গেল স্তব্ধ!
একটু পরেই নেমে আসবে তিমির
ওই প্রান্তর মাঠে অস্ত যায় মিহির,
ঘোলা অম্বুদে ছেয়ে আছে আকাশ
পুব দিক থেকে বইছে বাতাস।
কোথায় গেল রাখালের দল
কারো চলবেনা আজ বাহুবল!
পবনের তান্ডবে কাঁপবে ভূ-তল
বলাহক করছে কৌশলের ছল।
অন্তরীক্ষ থেকে নামবে বর্ষার ঢল
তরঙ্গিনীর নীর করছে টলমল!
বনানী পশুর দল ছুটছে দ্রুত পায়
খেচরের ঝাঁক কিচিমিচি গান গায়।
এখন তো গুম ধরা প্রচন্ড গ্রীষ্ম
গাঙের ধার থেকে দেখি দৃশ্য,
কালো বারিদ উঠেছে নীল গগনে
বৃষ্টির ধারা নেমে আসছে ভুবনে।
তটিনীর তীরে আঁছড়ে পড়ছে ঢেউ
তরী বন্ধ মাঝিরা ঘাটে নেই কেউ,
মুষলধারা বৃষ্টিতে হয়েছে অচল
গ্রামের পথ গুলি হয়ে গেছে পিছল।
ওই পাদপ দুলে ঘন-ঘন পথের পাশে
যেন তাদের দিকে কেউ ছুটে আসে,
রবি অস্ত গেছে এখনি আঁধার হবে
তায়দে ঢাকা অম্বর সন্ধ্যা হলো সবে।
বেশি দেরি নেই পোহাতে এ বেলা
ফিরে চলো কোরোনা অবহেলা
আজ হবেনা আসমানের নিচে ঠায়
এসো মোরা নিজ গৃহে ফিরে যায়।


রচনাকালঃ- ২১/০৬/২০১৭

ক্ষণস্থায়ী সময়


ক্ষণস্থায়ী সময় খুব দ্রুত গতিতে চলে যায়
মাঝে-মাঝে সে ধারণ করে ভিন্ন রূপ,
আর আগের মত নেই অপেক্ষার দিনগুলি
সময়ের সাথে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে!
বিষন্ন বিকেলে তার অপেক্ষার প্রহর গুনে
আগের মত এখন দাঁড়িয়ে থাকা হয় না,
তাইতো রাতে আলোহীন দ্যুলকের দিকে
অধীর দৃষ্টিতে চেয়ে দিন গুনে যায়।
আজ চিরতরে থেমে গেছে একাকী রোদন
জানিনা কেন অবুঝ শিশুর মত কাঁদতে ব্যর্থ!
কোমল হৃদয়ের উত্তাপে গলে না আঁখির বরফ
শুধু নীরবে গোপনে ভেবে যায় আগের দিনগুলি।
কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সুখের মুহূর্ত
খেলনার পুতুলে এখন আর মন ভরে না,
সময়ের সাথে হয়েছি শিশু থেকে কিশোর
তাই ধীরে-ধীরে চাহিদা বেড়েছে প্রতিদিন।
এখন আর নেই আগের মত ভাবনা
দেখতাম নিশিথে বিধুর বুকে কতকিছু,
এখন দেখলে মনে হয় ওগুলো শুধুই কলঙ্ক
আগের মত মনমুগ্ধ হয় না শশীর রূপে!
এখন শ্রাবণের বৃষ্টি নামলে ইচ্ছে করে না
ধূলোবালি মাখা নগ্ন গায়ে হাত পা ছুঁড়তে,
আজো প্রকৃতির অবদানের প্রতিটি অস্তিত্ব
সময়ের সাথে আমার হৃদয়ের মাঝে রূপ বদলায়।


রচনাকালঃ- ১৯/০৬/২০১৭

কারাগার - ৫


আহা তুমি এত সংকোচবোধ করছো কেন
মনে রেখ আমি কিন্তু অর্থ লোভী নই,
করব তোমায় আইনের চোখে নির্দোষ প্রমাণ
হারানো সম্মান আনব ফিরিয়ে সমাজের বুকে।

আমাকে বাঁচাবার জন্য কত বাধা বিপত্তি সহ্য করে
অবশেষে জোগাড় করলেন উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ,
সমস্ত প্রমাণের ভিত্তিতেই উচ্চ আদালতে আপিল করে
যা কিছু সাক্ষ্য-প্রমাণ ছিল সেখানে করলেন দাখিল।

আবার নিয়ে গেল মোরে সর্বচ্চো আদালতে
হাতে হাতকড়া আর কোমরে  দড়ি বেঁধে!
যখন আমি ওই নির্দয় কাঠগড়ায় গেলাম দাঁড়িয়ে
দেখলাম সন্তানকে বুকে জড়িয়ে কাঁদছে আমার স্ত্রী!

তখন শুরু হল সেই খুনের মামলার জেরা
মনে মনে ভাবলাম আর ফেরা হবে না ঘরে,
দুই উকিলের মধ্যে অনেকক্ষণ বিতর্ক চলার পর
অবশেষে আসলো আসল খুনি প্রকাশ্যে।

উকিল সাহেবার কঠিন প্রয়াস আর অতুলনীয় সাহস
মহামান্য আদালতের কাছে আমায় প্রমাণ করলো নির্দোষ,
কারাদণ্ড হল ছিল যারা মুগোশধারী অপরাধী
মুখ্য দোষী কে উচ্চ আদালত দিলেন মৃত্যুদণ্ড!

চোখের জল মুছে ফেলে আনন্দে হৃদয় ভরে গেল
সেদিন বুঝলাম শত বাধা আসলেও সত্যের জয় হয়,
আবার বাঁধব সুখের সংসার সাথে নিয়ে স্ত্রী আর পুত্রকে
সকল সুখের সূত্র খুঁজে পাব আমি তাদের মঝে।


রচনাকালঃ- ১৮/০৬/২০১৭

প্রেয়সীর মন


প্রেয়সীর মন অধীর আগ্রহে
আনন্দে কাটে বৃষ্টির দিনগুলি,
অনুভব করে প্রকৃতির পরশ
বেলির সৌরভে আসে অলি।

প্রকৃতি এসে ছড়িয়ে যায়
মন মুগ্ধকর ঘাসফুলের ঘ্রাণ,
আবেগী প্রণয়ে মোহময় মন
আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভিজে প্রাণ।

জ্যোৎস্না রাতে নীল গগনে
জমে হালকা বারিদের আবরণ,
অম্বরে নক্ষত্র করে বৃষ্টিস্নান
শীতল সমীরে জাগে শিহরণ।

ভেজা রজনীতে ডাকে প্যাঁচা
শালবনের তলায় তিমির নিশি,
প্রেমের পরশে ব্যাকুল হৃদয়
যেন অফুরন্ত বিষন্নতার রাশি।


রচনাকালঃ- ১৫/০৬/২০১৭

শূন্যতা

রজনীর অশ্রুসিক্ত নয়নে স্পর্শ করে যায়
বহুদিনের প্রতীক্ষিত সুস্পষ্ট মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি!
শত কলঙ্ক বুকের মাঝে লুকিয়ে রেখে
দিগন্ত ছোঁবার জন্য ছুটে আসে চাঁদ।
দুচোখের সামনে ভেসে ওঠা সেই সবুজ পথ
আলো আর আঁধারের মাঝে লুকোচুরি খেলে,
সিমান্ত খুঁজে পাবার আশায় ছুটে যায়
মাঝ পথে থমকে দাঁড়ায় মেলেনা ঠিকানা!
একাকি পথে কারো দেখা পইনা যখন
অন্তরীক্ষের তারারা হাসে আমায় দেখে,
জ্যোৎস্না রাতে কুঞ্জে ক্ষুধিত পশু কাঁদে
জেগে থাকে তখন নিরাকার অস্তিত্বের শূন্যতা।


রচনাকালঃ- ১৩/০৬/২০১৭

ঠিকানাহীন

হয়তো এ দেশের বুকে আমি
এক অসহায় আর ঠিকানাহীন,
কোনদিন পাইনি মাতার আদর
শুধু উপহার পেয়েছি ডাস্টবিন!
সদনের জন্য দেখেছিলাম স্বপ্ন
অবশেষে ঠায় হল ফুটপাতে,
সেখানে সারাক্ষণ থাকি অভুক্ত
আঁখি জেগে থাকে নিশিতে।
তিমির রজনীতে দেখতে পাই
এক ভিন্ন মুখোশধারী দানব!
প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়ায়
ভদ্রতার আবরণ জড়িয়ে মানব।
সুখের দেখা পাইনি আজও
জীবনের মুহূর্ত হয় বরবাদ,
র্নিজন রাত্রিতে শুনতে পাই
হৃদয়ের নিবিড়ের সেই আর্তনাদ!
ক্ষুধা নিবারণের জন্য যখন
সকলের দ্বারে বাড়িয়েছি হাত,
তাড়িয়ে দিয়েছে বারে-বারে
দেয়নি কেউ একমুঠো ভাত!
আজ আমি স্বাধীন যাযাবর
নেই কোন থাকার আশ্রয়!
অগ্নি পথে চলেছি একা
হয়েছি জীবনের কাছে পরাজয়।
কষ্টের মধ্যে শিক্ষালাভ করে
সহজ উপাধি পাই বেকার,
জানিনা আমার কি পরিচয়
শুধু পেয়েছি মানব আকার!
পরিচয়ের খোঁজে জন্ম নিয়ে
হয়তো আবার ফিরে আসব,
তবুও যদি না পাই ঠিকানা
তবে অক্ষির সলিলে ভাসব!
নেই পরিচয় নেই ঠিকানা
হয়তো ছিলনা কোন কালে,
ফুটপাতে মোর জীবন কাটে
ভয়াবহ শত কষ্টের বেড়াজালে!


রচনাকালঃ- ০৯/০৬/২০১৭

প্রেম ভিখারি

পড়ন্ত বিকেলে অর্ক লাল বর্ণ
ধারণ করে গঙ্গা নদীর কূলে,
শীতল সমীরণ বইছে সারাক্ষণ
তাতে যেন গাছপালা দুলে।
কিনারায় বসে শুধু ভাবি
আসলো আমার যৌবন কাল,
বসন্তের ফুল ফুঁটলোনা আজও
আহা পড়ল একি অকাল!
চাওয়া পাওয়া অপুর্ণ রয়ে গেল
তাইতো চিন্তা বড্ড করি,
প্রেমের ছোঁয়া পেলাম না এখনো
অসহায় হয়ে কেঁদে-কেঁদে মরি!
খুঁজে পাব কি রমণীর ঠিকানা
এ হৃদয়ে চলছে আহাজারি,
ভালোবাসার গোলাপ ফুঁটবে কবে
আমি এক প্রেম ভিখারি!

প্রেম খুঁজে ফিরি আমি
আজও সকলের দ্বারে-দ্বারে!
অপরূপ নারীদের মলিন মুখ
চেয়ে দেখি বারে-বারে।
ব্যাকুল মন থেমে থাকে না
এ-যে চায় শুধু ভালোবাসা,
হৃদয়ে ধরেছে ফাটল মায়াহীন
মরীচিকা করছে নিরাশা!
তিমির নিশিথে স্বপ্ন দেখি
চলে যায় জীবনের প্রতিটি সময়,
কেউ কি আছো এমন যে দুহাত
বাড়িয়ে প্রেম ভিক্ষা দেবে আমায়?
একা হেঁটে চলেছি রাজপথে
সেজেছি ছলনার শিকারি,
অফুরন্ত প্রেম পাব কবে
আমি এক প্রেম ভিখারি!

আশায় বেঁধেছি বুক দেখব
তাকে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন,
বলব দুজনে মনের কথা
হয়ে মধুর প্রেমে মগ্ন।
প্রতিটা শহর-নগরে ঘুরে ফিরি
এক টুকরো প্রেম পাব বলে,
আজও দিলনা কেউ প্রেম ভিক্ষা
ছেড়ে চলে গেল সকলে!
প্রতিটা প্রহর তার অপেক্ষায়
থাকি সকাল দুপুর সাঁঝে,
দুহাত বাড়িয়ে সে বলবে আমায়
এসো তুমি মোর হৃদয়ের মাঝে।
মিলবে কি এ ভুবনে এমন রমণী
যে হবে মোর জীবনের সহকারি,
প্রতীক্ষার দিন শেষ হবে কবে
আমি এক প্রেম ভিখারি!


রচনাকালঃ- ০৬/০৬/২০১৭

বৃষ্টিভেজা রাত্রি

আঁধার রাত্রির পৃথিবীতে পড়ে আছে
নিথর স্তব্ধ হয়ে সহস্র ভিন্ন প্রকৃতির জীব,
গৃহ থেকে বেরিয়ে লক্ষ্য করে দেখতে পাই
কালো জলদের আবরণে ঢেকে গেছে গোটা অম্বর।
যেভাবে জ্বলন্ত উত্তাপের ওপর বরফ রেখে দিলে
অনায়সে সেই বরফ গলতে শুরু করে,
প্রচন্ড গ্রীষ্মের অনুভূতি তার বুকের মাঝে চেপে রেখে
ঠিক তখনি বলাহকের বরফ গলে বৃষ্টি আসে।
খোলা দ্যুলকের বুকে দেখা গেলনা বিধু
বৃষ্টির ঝম-ঝম শব্দের তালে ছন্দ হারায় বন,
রাতে র্নিজন পথের ধারে চপলার আলোকে দেখি
পেয়ারার ডালে বসে বৃষ্টিতে ভিজছে একটি বিহঙ্গ।
সদনের উত্তরে আম বাগানের পাশে টিউবঅয়েল
বৃষ্টিতে ভিজে বুকে অক্লান্ত কান্না নিয়ে নিশ্চুপ!
ঝোড়ো অনিলে বৃষ্টির ধাক্কা এসে লাগে
ক্ষিতির তৈরি ছোটো কুঁড়ে ঘরেরর দরজায়।
ঝড়ের প্রকপে দরজাটা বারে-বারে বন্ধ হয়
খড়ের চালাগুলো বৃষ্টিতে স্নান করে কাঁদে!
পাদপের শাখা প্রশাখা গুলো প্রলয়ের প্রকপে
ধাক্কা খেয়ে বারে-বারে যেন ঢলে পড়ে মৃত্তিকায়।
কুঁড়ে ভবনের দেওয়ালকে আলিঙ্গন করে বৃষ্টি
যেন ছিড়ে বের করতে চায় হৃদয়ের কঙ্কাল!
নিভে যাওয়া উনুন প্রতিক্ষণে কাঁদতে থাকে
মেঝের মাটি ভিজে থাকে ছোট্ট রান্নাঘরে।
ধীরে-ধীরে অম্বুদের গর্জন কমে যায়
জোরালো গন্ধবহ আর বৃষ্টি বিশ্রাম নিতে চায়,
রাতের মধ্যপ্রহরে টুপটাপ বৃষ্টির সাথে শুনি
ফাঁকা পথে দ্রুত গতিতে ছুটে যায় মোটর গাড়ি।


রচনাকালঃ- ০৩/০৬/২০১৭

কারাগার - ৪

যে অপরাধ আমি করিনি তার জন্য হল শাস্তি
করলো মিথ্যা প্রমান গন্য মহামান্য আদালত,
আইন মানবে প্রমাণের ভিত্তি মুখের কথা নয়
লোকে ঠিকি বলে বিধানের চোখ থাকতেও অন্ধ!

ফাঁসির সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশের খবরের কাগজে
এক বাবু এসে সাক্ষর করালো মৃত্যু পরোয়ানার খাতায়!
স্লোগান দিল সারা দেশ অপরাধীর শাস্তি চায়
দুচোখে বেঁধেছিলাম কত স্বপ্ন সব নিমেষে নষ্ট হল!

অবশেষে নিভে যাওয়া প্রদীপ আবার জ্বলে উঠলো
ছোট্ট একটা আশার কিরণ আমি দেখতে পেলাম,
আমার ফাঁসির খবর এক উকিল সাহেবা শুনতে পেয়ে
তিনি কারাগারে আমার সাথে দেখা করতে আসলেন।

আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে তারা
ছিল মোর এক বন্ধু আর কিছু আত্মীয় সজন,
সব কিছু ঘটনা খুলে বললাম উকিল সাহেবাকে
দেখলাম তাঁর মধ্যে সহানুভূতি আর দয়ার ভাবনা।

সান্তনা দিয়ে মোরে উকিল সাহেবা বললেন
তোমার সাথে মিথ্যে ছলনায় যা কিছু ঘটলো,
রেহায় পাবেনা ঐ সন্ত্রাশবাদীরা আমি তাদের ধরব
উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতেই তোমায় করব নির্দোষ প্রমাণ।

কাঁদতে কাঁদতে তাঁকে বললাম আমি যে আজ অর্থহীন
আপনার উপকারের ঋণ কি করে পরিশোধ করব,
অসহায় দারিদ্রতার মধ্যে কষ্ট করে কাটিয়েছি জীবন
ভয়াবহ মৃত্যুর দুঃস্বপ্ন দেখতাম প্রতি রাতে!


রচনাকালঃ- ০২/০৬/২০১৭

মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭

দ্যুলকের ঘর

আজকে চলো নীরদ হয়ে
ঝরাব দুজন শ্রাবণ ধারা,
অম্বর নীলে শান্ত মিছিলে
মোরা হব বাঁধন হারা।

তটিনী যেমন এক ধার ভেঙে
অপর কিনারায় গড়ে চর,
তুমি আমি নীল দ্যুলকে
আনন্দে বাঁধব সুখের ঘর।

তিমির রজনীর শেষে যেমন
ভোরের স্নিগ্ধ দিবাকর আসে,
তেমনি আমি মিশে থাকব
সারাক্ষণ তোমার নিঃশ্বাসে।


রচনাকালঃ- ২৮/০৫/২০১৭

প্রকৃতির প্রেম

গ্রামের শেষে সবুজ বৃক্ষ দিয়ে ঘেরা শালবনে
প্রকৃতির প্রেমের এক অপরূপ দৃশ্য ফুটে ওঠে,
পথ চলা এক কিশোরীকে আলিঙ্গন করে
পাখিডাকা ভোরে মিষ্টি মিহিরের প্রভা।
সবুজ ঘাস মাড়িয়ে সে নীরবে হেঁটে চলে
কান্তার পার হয়ে যেতে চায় দূর-বহুদূর!
তাইতো তার এক মুহূর্ত থামার সময় নেই
হাঁটছে ধান ক্ষেতের শক্ত আলের ওপর দিয়ে।
তার দুহাতে রয়েছে লাল রঙের কাঁচের চুড়ি
নগ্ন পায়ে বেজে ওঠে একজোড়া নূপুরের শব্দ,
মাথার খোলা অলক শান্ত মিছিলের ভিড়ে নীরব
আর শীতল সমীরে উড়ে তার নিল ওড়না।
প্রাচীন কালের মৃত্তিকার স্তূপ ভেদ করে
হাতে একটি রঙ্গনের সাজি নিয়ে হেঁটে চলে,
ধীরে-ধীরে বেলা বাড়ে প্রকৃতির নিয়মে
গগনের বুক চিরে বয়ে যায় তপ্ত গন্ধবহ।
প্রকৃতির হাত ধরে হেঁটে চলে ক্লান্ত কিশোরী
বট- পাদপের ছায়ার মঝে খুঁজে পাই শান্তি পরশ,
মাতাল বৈশাখে নভোঃ থেকে প্রলয় নামে
বাতাসের ধাক্কায় নয়নপত্র আছড়ে পড়ে।
কোকিলের মন মুগ্ধকর সুমধুর কণ্ঠে গান
নিদ্রা ছড়ায় কিশোরীর ক্লান্ত আবেগের মাঝে,
হঠাৎ করেই উঠে বসে ঘুমহারা নেত্রে
স্বপ্ন ভাঙার বেদনায় কাতর তার আবেগী মন!
বাস্তবতার ভুবনকে কল্পনায় এঁকে দৃষ্টিবদ্ধ করে
প্রাচীন কোনো অনুভবের এক অজানা চিত্র,
ক্লান্ত কিশোরীর পা কখনো থেমে থাকে না
হেঁটে যায় নিঃসঙ্গতার স্বপ্নের রাজপুত্রকে খুঁজতে!
মানুষের ভিড়ের মাঝে খুঁজে ফিরে অনন্ত সুখ
অবুঝ কিশোরী আজও বোঝেনা প্রকৃতির প্রেম!
প্রতীক্ষিত প্রেমিকের চোখে খোঁজে ভালোবাসা
প্রতিনিয়ত নীরবতার বুকে খোঁজে শান্তি।
কল্পনার জগতের থেকে বাস্তব অনেক কঠিন
সত্যের আয়নার সামনে নিজেকে দেখেনা কেউ!
জানিনা মানুষ কেন ভুলে যায় অমর প্রেম
কিন্তু প্রকৃতি যে ভোলেনা মনে রাখে সব কিছু।


রচনাকালঃ- ২৩/০৫/২০১৭

আমাকে ভালবাসার পর

আমাকে ভালবাসার পর তোমার
জীবনে ফুটেছিল বসন্তের ফুল!
তোমার ওই কিশোরী মন ছুটে
আসতে চাইত আমার কাছে।
আমি প্রথম দেখেছিলাম সেদিন
তুমি কলশি নিয়ে যাচ্ছিলে ঘাটে,
মায়ায় বাঁধা তোমার মলিন মুখ
দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম।
তোমার মধুময় মিষ্টি হাসিতে
সারা আকাশ যেন ছেয়ে যেত,
কোকিলের মতো ওই কন্ঠস্বর
আমার কানে এখনো বাজে।

আমাকে ভালোবাসার পর তুমি
হারিয়ে ফেলছিলে লাজ-লজ্জা!
আমার প্রেমের পরশে আনন্দিত
হয়েছিল তোমার যৌবনমগ্ন মন।
পরমুহূর্তে তুমি না থাকতে পেরে
ছুটে এসেছিলে আমার কাছে,
তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমি
প্রেমের আলিঙ্গনে মগ্ন হয়েছিলাম।
যে লাল বর্ণের কোমল ঠোট
কখনো কেউ স্পর্শ করেনি,
স্বপ্নের প্রেমিক পুরুষ হয়ে চুম্বনে
শিহরিত করেছিলাম তোমার অঙ্গ।

আমাকে ভালোবাসার পর তুমি
ভুলে গেছিলে বাস্তব আর অবাস্তব!
মনে আছে বৃষ্টির দিনে পথে
হেঁটে যখন সদনে ফিরছিলে?
খোলা কুন্তল আর ভেজা অঙ্গ দেখে
আমার মনে জেগেছিল বাসনা,
আমি পিছন থেকে দৌড়ে গিয়ে
তখন তোমার হাতটি ধরেছিলাম।
সাথে সাথে থর-থর করে কেঁপে
উঠেছিল তোমার কোমল হৃতপিন্ড,
সেদিন নিথর স্তব্ধ হয়ে দেখেছিলাম
তোমার ওই ভয়ঙ্কর দৃশ্য।

আমাকে ভালোবাসার পর
তুমি করনি সমাজের ভয়!
অপরূপ সাজে কলেজের গেটের
সামনে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকতে।
বিপরীত দিক থেকে বাইক
নিয়ে ছুঁটে আসতাম আমি,
আর তোমাকে প্রাণ ভরে দেখার
পর চলে যেতাম এদিক সেদিক।
র্নিভয়ে তোমার হাতে গোলাপ দিয়ে
বলেছিলাম প্রথম ভালোবাসার কথা,
সেদিন পথে দাঁড়িয়ে দেখেছিল
মুর্শিদাবাদ শহরের জনগণ।

আমাকে ভালোবাসার পর তুমি
দেখতে শুরু করেছিলে রঙিন স্বপ্ন!
কোমল গালে স্পর্শ করতেই
লজ্জায় নত হয়েছিল তোমার শির।
শীতল কোলে মাথা রেখে
আমি যখন গল্প করতাম,
আমার মস্তকে হাত ফিরিয়ে দিতে
আর দূর হত সমস্ত দুঃখ কষ্ট।
তোমার মায়াবী নেত্রে দেখতাম
আমার প্রতি অফুরন্ত প্রেম,
আমাকে নিয়ে আঁকতে শুরু করেছিলে
তখন হাজারো রঙিন চিত্র।

আমাকে ভালোবাসার পর তুমি
হারিয়ে ফেলেছিলে নিজেকে!
আমাকে না দেখতে পেয়ে তোমার
মন বিচলিত হয়ে পড়েছিল।
বাধা বিপত্তি কাটিয়ে অজস্র কান্নায়
চিৎকার করে ডেকেছিলে আমায়!
আমি নিথর হয়ে দুহাত বাড়িয়ে
দাঁড়িয়ে ছিলাম তোমার অপেক্ষায়।
তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে সকলের
সামনে ধরেছিলে আমার হাত,
তোমায় জড়িয়ে ধরে সেদিন কেঁদেছিলাম
সে কথা আজও মনে পড়ে আমার!


রচনাকালঃ- ১৮/০৫/২০১৭

এক প্রহর

সুদূর প্রান্তরে কাননের ডালগুলোর কচি পাতা
প্রখর দিবাকরের খরতাপে যেন ক্লান্ত হয়ে ওঠে,
শালবনে বাবলা পাদপে ঘন কাটার জালে
জানিনা কেন আটকে যায় স্বপ্নের ঘুড়ি!
প্রত্যহ নিশিতে আঁধারে আচ্ছন্ন থাকা পথে
কুকুর গুলো কাঁদে জোমে থাকা অতৃপ্ত বাসনায়!
জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে উনমূক্ত নিল গগনের গন্ধবহে
উড়ে আসে কিশোরীর হলুদ রঙের ওড়না।
বারে-বারে পিছন ফিরে চেয়ে দেখি তার দিকে
সে বিহঙ্গের মত ডানা মেলে উড়ে চলে যায়,
কিসের প্রত্যাশায় যেন ছুটে আসে বায়ু ভেদ করে
তবুও সে ফিরে দেখে না উড়ে চলে যায়!
অম্বুদের আবরণে মিশে যেতে চাই তার মন
শান্ত পরিবেশের ঘুমে বিলীন হবে বলে,
সব খেচর ফিরে যায় তাদের নিজ বাসায়
কিন্তু তার মনে জাগেনা ঘরে ফেরার আবেগ!
ভূ-কম্পনে কেঁপে ওঠে বসুন্ধরার মৃত্তিকা
অন্তরীক্ষের বিষণ্ণ জলদে এখন অনেক ক্লান্তি,
প্রতীক্ষিত সন্ধ্যায় মৃদু প্রদীপের কিরণ জ্বেলে
অনুভব করছি জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো!
মহা প্রলয় ঘটার আশঙ্কায় থর-থর কাঁপে হৃদয়
জীবনের পাতা বৃক্ষ ফেকে ঝরে পড়বে এবার!
ছুটে আসছে মৃত্যু আর বেশি দেরি নেই
হয়তো শেষ হবে প্রাণ আর মাত্র এক প্রহর!


রচনাকালঃ- ১২/০৫/২০১৭

পবিত্র মাহে-রমজান

সন্ধ্যায় দ্যুলকের রঙ হল লাল
শুরু হল মাগরিবের আযান,
অম্বরে উদয় হল রমজানের শশী
এলো পবিত্র মাহে-রমজান।
প্রতি বছর এই পবিত্র মাসে
অবতীর্ণ হয় শান্তির বান,
পরম করুনাময় মহান আল্লাহ
রহমত বরকত করেন দান।
সমগ্র মুসলিম জাতিরা শোনো
লাগতে দিওনা ঈমানে দাগ!
তিনটি ভিন্ন স্তরে করা হয়েছে
এই পবিত্র রমজানকে ভাগ।
প্রথম দশটি রোজা করলে
বর্ষণ হবে অফুরন্ত রহমত,
আল্লাহ এ কালে দেবেন বরকত
দান করবেন অগণিত নিয়ামত।
দ্বিতীয় দশটি রোজা করলে
তিনি করবেন সকলকে মাগফিরাত,
পাহাড় সমতুল্য গুনাহ মাফ করে
অনায়সে পার করাবেন পুলসিরাত।
তৃতীয় দশটি রোজা করলে
মিলবে জাহান্নাম থেকে নাজাত,
জান্নাতের বাগিচা উপহার দেবেন
মৃত্যুর পর করবেননা আঘাত।
আল্লাহ সকলকে দান করেন
এ মাসে সত্তর গুণ নেকি বেশি,
মন ঈমান সব স্বচ্ছ রেখে
ইবাদত করতে হবে দিবা-নিশি।
এ মাসে নরকের দ্বার বন্ধ করে
দেওয়া হয় পাপিজনদের মুক্তি,
জান্নাতি সমীর বহে সারাক্ষণ
তাদের লাগেনা কোনো ক্লান্তি।
ফরজ ওয়াজিব পড় প্রতিদিন
আগ্রহের সাথে নফল ও সুন্নত,
আদায় কর তারাবির নামাজ
সফল কর সকল ইবাদত।
সত দুঃখের বেড়াজাল কাটিয়ে
জীবন ধর্মের পথে অগ্রসর কর!
এসেছে মহা সুযোগের দিন
তাই সকলে রোজা নামাজ ধর।
এ মাসের সাতাশের রাত্রিতে
অবতীর্ণ হয়েছিল আল-কোরআন,
হাজার রজনীর থেকেও এ নিশি
ইবাদতের জন্য মহা মূল্যবান।
শবে ক্বদরের নিশিথে দুহাত তুলে
নিজের গুনাহের জন্য চাও ক্ষমা!
মহান আল্লাহ-পাক মাফ করবেন
ধুয়ে যাবে যত গুনাহ আছে জমা।
বহু প্রতীক্ষার পর আসে এই রাত্রি
হবে তোমাদের মুক্তির আরাফাত,
সকলের দোয়া কবুল করবেন
তাঁর কাছে করলে মোনাজাত।
জন্ম নিয়ে এসেছ ভূ-মণ্ডলে
একদিন সকলকে হবে মরতে!
বীর বাহুবল কেউ পারবেনা
সেদিন দানবরূপি মৃত্যুকে রুখতে!
রমজান মাসে রোজা রেখে
দিতে হবে শরীরের জাকাত,
নাহলে মনে রেখ নিধনের পর
আল্লাহ করবেন তখন কুপকাত!
হৃদয়ে মাঝে থাকে যদি বিশ্বাস
মনের নিবিড়ে থাকে দোজখের ভয়!
তাহলে তাঁর হুকুমের পালন কর
নিশ্চয় ক্ষমা করবেন দয়াময়।
উদারতার প্রতীক শ্রেষ্ঠ নবী
শোনো হজরত মোঃ সাঃ 'র' বাণী,
শত যন্ত্রণা সহ্য করেছেন তিনি
কতনা ফেলেছেন চোখের পানি!
অনুসরণ কর মোঃ সাঃ কে
চলো তাঁর দেখানো সঠিক পথে,
মরনের পর ঐ আঁধার কবরে
কেউ থাকবেনা তোমাদের সাথে!
ভক্তির সাথে করলে রোজা
ইন্তেকালের পর সে হবে রক্ষা কবজ,
নরকের শিখা থেকে রাখবে দূরে
আল্লাহ'র কাছে করবে আরজ।


রচনাকালঃ- ০৬/০৫/২০১৭

কারাগার - ৩

নিষ্ঠুর খেলা খেলছে বিধান চারিদিকে যেন হাহাকার
লোহার শিকল পারানো কারাগারে আমি বন্দি!
ভাবিনি এমন দিন কখনো আসবে আমার জীবনে
অসহায় আমার স্ত্রী পুত্র কি করে তারা বাঁচবে!

পড়ে আছি কারাগারে গায়ে দিয়ে একটি ছেড়া কম্বল
অর্থ উপার্জন করার জন্য একমাত্র সম্বল আমি ছিলাম,
ভাবনায় আমার হৃদয় কেঁপে যায় এখন কি হবে তাদের
জানিনা এ কোন কষ্টের সম্মুখে ফেললো বিধাতা।

হার মানলো আজ সত্য জিতে নিলো মিথ্যে
সঠিক বিচার পেলামনা এ ভুবনে চাপা রইল তথ্য,
চিৎকার করে বললাম ও ঈশ্বর তুমি শোনো-শোনো
আমার মত এত দুঃখের যেন জীবন আর কাউকে দিওনা!

কারাগারের জীবন এ-যে বড় কষ্টের বড় বেদনার
খাকি পোশাক পরা বাবুরা প্রতি মুহূর্তে দেয় যন্ত্রনা!
একখানি আঁধার ছোট্ট ঘরে আমায় ওরা রাখলো
দিন ফুরালো অনাহারে তৃষ্ণার্ত মুখ গেল শুকিয়ে।

কুঁড়ে ঘরে আমার স্ত্রী নীরবে সারাক্ষণ মগ্ন কান্নায়
একফোটা দুধের জন্যে পুত্র আর কাঁদবে কতক্ষণ!
আর কি করবে তা ছাড়া আজ ওরা তো বড় অসহায়
ঈশ্বর যেন আজ নিরুপায় হয়ে কিছু দেখতে পাইনা।

একটি দুঃসংবাদ কারাগারে আমি শুনতে পেলাম
ফাঁসির জন্যে নাকি দিন ধার্য করা হয়েছে,
সেই কথা শুনে মোর বাহুবল গেল কোমে
দুনয়ন থেকে ঝরতে লাগলো অজস্র নোনা জল!


রচনাকালঃ- ৩০/০৪/২০১৭

শূন্য জীবন

যেদিন তুমি আমায় একা ফেলে রেখে চলে গেলে
উপহার দিয়ে গেলে কঠিন দুঃসহ কিছু অসহ্য যন্ত্রণা!
মুহূর্তের মধ্যে থমকে গেল আমার রঙিন ধরণী
স্বপ্ন ভাঙার বেদনা জমা রয়ে গেল হৃদয়ের নিবিড়ে!
এখন আর দেখতে পাই না দ্যুলকের গোধূলি
দল বেঁধে কালো বারিদ ভেসে চলেছে প্রতিনিয়ত,
এখন প্রতিটা সময় কাটে অমাবস্যার ত্রিযামার মত
বেদনার অম্বুদের আবরণে ঢেকে গেছে অন্তরীক্ষের ইন্দু!
চঞ্চলা তিস্তার মত ছিল আমার শীতল হৃদয়
বনভূমির কুরঙ্গের মত করতাম তোমার প্রতীক্ষা,
চিরতরে কোথায় যেন হারিয়ে গেল স্বপ্নের দিনগুলি
হৃদয়টা হয়ে গেল নির্জন অটবীর মতো শূন্য!
নিরাকার বিষাক্ত জীবনটা নীরবে ধারণ করেছে
গোধূলি লগ্নের রক্তিম গগনের মতো লাল বর্ণ!
মনের অতলে জমেছে অসংখ্য অশুভ কালো নীরদ
চারিদিকের স্তব্ধতায় মস্তিস্কে হানা দেয় শূন্যতা!
এখন আর শুনতে পাই না দ্বিজদের কোলাহল
দেখতে পাই না বর্ষার দিনে পেখম মেলে ময়ূরের নাচ,
জানি না কেন হাজার চেষ্টা করেও আঁকতে পারি না
নীল রঙে ভেজা কলম তূলিতে তোমার চিত্র!
বর্ণ হারিয়ে ফেলেছে সুদূর সবুজ প্রান্তরের লতা
খুঁজে পাই না কোথাও বেঁচে থাকার
কিরণ!
হৃদয়ের গভীরে উদিত হওয়া প্রেমের ভানু,
জীবনের নীরবতার জালে বন্দি হয়ে অস্ত গেছে!
প্রতি নিশিতে অক্ষির নোনা নীরে ভেসে ওঠে
তোমার সঙ্গে কাটানো সেই আগের দিনের প্রতিচ্ছবি!
আজ সবই ক্লেশের গিরির নিচে চাপা পড়ে
প্রতিক্ষণে কীসের প্রত্যাশায় যেন মৃত্যুর প্রহর গুনছে!


রচনাকালঃ- ২৬/০৪/২০১৭

ভ্রমণ

ভায়ের প্রতি ভালোবাসা আছে অনেক বিশ্বাস
সে যখন সামনে আসে ফেলি দীর্ঘ নিশ্বাস,
তাকে আমি ডাকলাম ভ্রমণ করব বলে
একি সাথে ঘুরব মোরা যাব দুজন চলে।
অবশেষে সহোদর এল দিল সে দেখা
হাসি ঠাট্টা আর গল্প গুজোব সবই হলো শেখা,
জিন্স প্যান্ট আর টিসার্ট সঙ্গে একটা বাইক
চোখে আছে সানগ্লাস মুখে সিগারেটের পাইপ।
একটু খানি এগিয়ে দেখি সামনে একটা নদী
অনেক তাড়া আছে মোদের তরী আসে যদি,
অবশেষে নাও এলো আছি মোরা দুজন
যাব কোথায় হারাব কোথায় জানে আর কজন।
তটিনী পার করেই চেপে গেলাম বাইকে
ছুটলাম পলসন্ডার দিকে এবার মোদের দেখে কে,
একটু থামার সময় নেই ছুটছি পবন গতিতে
কার্য কলাপ ঘটছে যা কিছু দুজনের সমমতিতে।
এদিক ওদিক দেখছি মোরা লক্ষ্য ছিল নারী
আজ মোরা দেখিয়ে দেব অনেক কিছুই পারি,
দুদিকে সুন্দর দৃশ্য মধ্যেখানে ফাঁকা রাস্তা
গাড়িতে বসে খাচ্ছি বাদাম আর পাস্তা।
একটু পরে থেমেই মোরা তুললাম অনেক ছবি
দিগন্তের দিকে চেয়ে দেখি আমিও একজন কবি,
পথের ধারে বসে দেখি যত দুর যায় দৃষ্টি
সবুজ ক্ষেত বহুরূপ সাজে প্রকিতিরই সৃষ্টি।
দোকানে গেলাম আমি কিনলাম অনেক খাবার
খাওয়ার পরে ছুটলাম যেখানে ছিল যাবার,
সামনে এগিয়ে দেখি এমন একটি মেয়ে
প্রতিমার সাজে দাঁড়িয়ে আছে সারা জগৎ ছেয়ে।
এত সুন্দর দেখতে যে মুখ ফেরানো গেল না
এমন রূপময় কামিনী কোথাও খুঁজে পাব না,
চোখে চোখে কথা হল মনে আছে মিল
বুকের ভিতর ঘন্টা বাজে ছুড়লাম শূন্যে ঢিল।
আমায় দেখে সে একটু খানি দিল মুচকি হাসি
ভাবলাম এইবার বলেই ফেলব তোমায় ভালোবাসি,
রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল নীল পরীর বেশে
তার কাছে যেতেই হারিয়ে গেলাম ভিন্ন রঙ্গিন দেশে।
তাকে প্রপোস করতে পারলামনা আমি একটা গাধা
অনন্তকাল ভালোবেসে যাব থাকবেনা কোন বাধা,
তোমার প্রেমের ছোঁয়া পেয়ে ধন্য হল জীবন
সুখে থেকো ও রমণী তুমি সফল হল ভ্রমণ।


রচনাকালঃ- ২০/০৪/২০১৭

নীল পরী

তুমি নীল পরীর মত ডানা মেলে উড়ে আসো
অম্বরের রংধনুর সাতটি রঙের প্রলেপ লাগিয়ে,
তুমি ঐ সবুজ মাঠের প্রান্তে অরণ্যে সাথে মিশে
প্রতিদিন রাতের আসমানে তারার মাঝে হও বিলীন।
তুমি পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আবরণে মুখ ঢাকো
আষাঢ়ের বৃষ্টির দিনে প্রেমের সুরে গান কর,
তুমি পাখি রূপে ডানা মেলে যাও দ্যুলকের বুক চিরে
আমায় ঘুম পাড়াও সবুজ আঁচলের পরশ দিয়ে।
তুমি বসন্ত হয়ে ধরণীর মুখে ফোটাও হাসি
সর্ষে ফুলের ক্ষেতে মধুকরের বেশে যাও হারিয়ে,
তুমি প্রতি রাতে রঙিন স্বপ্ন হয়ে দেখা দাও
প্রতিক্ষণে কাছে এসে মনের সাথে বল কথা।


রচনাকালঃ- ১৫/০৪/২০১৭

রক্ত দান

চারিদিকে যেন চলে হাহাকার
তাই রক্ত অনেক বেশি দরকার,
জ্বরা মৃত্যু দুরারোগ্য করে ফন্দি
অসুস্থতার বেড়াজালে মানব বন্দি।
মানুষ পড়ে থাকে হাসপাতালে
মৃত্যুর মুখে পতিত হয় অকালে!
আসল সময় পড়ে রক্তের অভাব
কবে বদলাবে মানুষের স্বভাব?
নর-নারী লড়াই করে মৃত্যুর সঙ্গে
বেদনার ক্রুশ হানে নিথর অঙ্গে!
এভাবে রক্তের অভাবে মরতে হয়
মানতে হয় মৃত্যুর কাছে পরাজয়!
অর্থের অভাবে মেলেনা রক্ত
অসুস্থ শরীর হয়ে ওঠে বিষাক্ত!
দাঁড়িয়ে দেখতে হয় মৃত্যু যন্ত্রণা
মানব সমাজের এ কেমন মন্ত্রণা!
করুণ দৃশ্য দেখে হয়েছি অস্থির
তাই বসিয়েছি রক্ত দান শিবির,
গর্বের সাথে করব রক্ত দান
বেড়ে যাবে মোদের আত্ম সম্মান।
শারীরিক অসুস্থতাই আসে ক্লান্তি
রক্ত দান করলে পাবে শান্তি,
হতে দেবনা সমাজের অবসান
রক্ত দানে থাকবে জাতির অবদান।
রক্তের মধ্যে নেই কোনো ব্যবধান
রক্ত'ই গড়ে ভালোবাসার সম্প্রদান,
রক্ত দানে থাকলে ভক্তি
একত্রিত হবে জাতির শক্তি।
রক্ত বোঝে জীবনের মর্ম
রক্তের কোনো হয় না ধর্ম,
ভিন্ন ধর্ম সহ হিন্দু মুসলমান
এসো সকলে মিলে করি রক্ত দান।
এসো দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ায়
তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়,
এসো গায় জীবনের জয়গান
সঙ্গবদ্ধ হয়ে করি রক্ত দান।
রক্ত দান করতে কোরোনা ভয়
একদিন হবেই হবে মোদের জয়,
নেত্রে যদি থাকে অশ্রুর বান
তবে এসো নির্ভয়ে করি রক্ত দান।
আজ এসো মোরা শপথ করি
পরস্পরের হাত শক্ত করে ধরি,
আর যেতে দেবনা কারো প্রাণ
মোরা স্বেচ্ছায় করব রক্ত দান।


রচনাকালঃ- ০৯/০৪/২০১৭

পরিবেশ দূষণ

চারপাশের সমস্ত কিছু নিয়ে গড়ে উঠেছে পরিবেশ
দূষণের কারণে ধীরে-ধীরে হচ্ছে প্রকৃতি শেষ,
পরিবেশের অবদানে গড়ে উঠেছে জাগতিক পরিস্থিতি
মানব সভ্যতার ভুলের কারণে প্রকৃতির হচ্ছে দুর্গতি!
নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত আর গগনের ঝরা বৃষ্টি
বন-জঙ্গল, পশুপাখি সব'ই হল পরিবেশের সৃষ্টি,
গাছপালা, বন্যপ্রাণি, মাছ, আর কীট-পতঙ্গ করছে দান
আলো, উত্তাপ জল, বায়ু, মাটি বাঁচায় মোদের প্রাণ।
বিভিন্ন রাসায়নিক গ্যাস নির্গত হয়ে সমীর দূষিত হচ্ছে
কলকারখানায় জ্বালানি গ্যাসের ফলে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে,
যানবাহনের নির্গত ধোঁয়া অনিলের সুদ্ধতা কেড়ে নিচ্ছে
পারমানবিক বিস্ফোরণ সভ্যতাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে!
কলকারখানার বর্জ্যপদার্থ দূষিত করছে পানিয় জল
মানব দেহে অসুখে বাসা বাঁধছে এসব তারি প্রতিফল,
নোংরা পচা আবর্জনা অর পশু পাখির মল-মুত্র
নির্গত হচ্ছে তটিনীর নীরে এ সবই হল দূষণের সূত্র!
কৃষি ও শিল্প বিপ্লব নষ্টের একটা অন্যতম কারণ
জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে ঘটছে ভূমি দূষণ,
শহর এলাকার আবর্জনার স্তুপ পচে মৃত্তিকা দূষিত হচ্ছে
তার কারণে নানা সংক্রামক ব্যাধির দূতের বিস্তার ঘটছে!
নিদারুণ সৃষ্টিকারি যান্ত্রিকতার ফলে দূষণ হচ্ছে শব্দ
কলকারখানা ও যন্ত্রদানবের বিচিত্র হর্ণ থাকছেনা দব্ধ,
বাজি-পটকার আওয়াজ মারাত্মক আকার করছে ধারণ
শহরের পথে যানবাহনের আওয়াজ করছে শব্দ দূষণ!
সমাজের বুকে মনস্তাত্বিক দূষণ অতি মাত্রায় ঘটছে
অপসংস্কৃতির মত মানসিক রোগে সজাগ থেকে দূরে হটছে,
অতি ভাবনা মানসিক রোগের যদি না কর শোধন
অপরাধ প্রবণতা বেড়ে মানব সভ্যতার হবে অধঃপতন!
নানান ধরনের পরিবেশ দূষণ থেকে পেতে হলে মুক্তি
সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের সচেষ্ট হয়ে দিতে হবে যুক্তি,
সংবাদপত্র, টিভির মাধ্যমে প্রচার বাড়ানোর করছি নিবেদন
ছাত্রছাত্রি আর সমাজের মানুষকে হতে হবে সচেতন।
জল দূষণ, ভূমি দূষণ রোধের জন্য সঠিক তথ্য হবে জানতে
শব্দ দূষণের জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশ হবে মানতে,
অপসংস্কৃতিক দূষণ রোধের জন্য ঘটাতে হবে জাগরণ
সর্বদা গুরুত্ব দিয়ে গড়ে তুলতে হবে সমাজিক বনসৃজন।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের জন্য এগিয়ে এসেছে
পাঁচ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে,
পরিবেশ মালিন্যমুক্ত হলে ধরণীর সভ্যতা সুন্দর গড়ে উঠবে
অন্যথা একদিন জরা ও মৃত্যু ভীষণ্য ধারায় পরিণত হবে!


রচনাকালঃ- ০৪/০৪/২০১৭

সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭

কারাগার - ২

বেঁধেছিলাম তাকে নিয়ে সুখের সংসার
কিছু দিন পরেই সব অন্ধকারে পরিণত হল!
স্বার্থের জন্যে বন্ধু-বান্ধব সরে গেল দূরে
অর্থের লোভে আপনজন হল পর।

জমি বিবাদে এক ব্যাক্তিকে তারা নির্দয় ভবে করলো খুন
আমার নামে থানায় মিথ্যা মামলা করলো দায়ের,
অন্ধ আইন আমার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে
আলয় থেকে দাগী আসামীর মত ধরে নিয়ে গেলো!

কত হাতেপায়ে ধরে কাকুতি মিনতি করলাম
তাদের বললাম বাবু আমি খুন করিনি,
বুঝলাম এ যুগে সত্যের যে বড় অভাব
কবে বদলাবে পৃথিবীর বুকে মানুষের মন।

মিথ্যে ছলনার ফন্দিতে জড়িয়ে জীবনে শুরু হল হাহাকার
আমায় লোহার বেড়ী পরিয়ে বন্দি করলো কারাগারে!
তুলে ধরলো আদালতের সামনে আমার শাস্তির জন্য
অপরাধী হিসেবে হলাম গণ্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে!

তার পরে সেই ছলনার খেলার ঘটলো অবসান
মহামান্য আদালত দিলো মৃত্যু দন্ডের আদেশ!
সাথে সাথে মোর হৃদয় খুন্ন হয়ে গেলো চৌচির
আর স্থির রাখতে পারলাম না আঁখির জল!

অর্ধাঙ্গী সইতে না পেরে অজস্র ধারায় কাঁদতে লাগলো
গগন থেকে মাথার ওপর ফেটে পড়লো বজ্রপাত!
বারে বারে বলতে লাগলো আজ আমি যে বড় অসহায়
বড় কষ্টের কত বেদনাময় তুমিহীন এ জীবন!


রচনাকালঃ- ২৮/০৩/২০১৭

মিথ্যে স্বপ্ন


দুজন মিলে জ্যোৎস্না নিশিতে
করেছি কত লুকোচুরি খেলা,
এলোমেলো সব ভাবনা গুলো
শুধুই পেয়েছে অবহেলা!

নীরবে বসে জ্বলন্ত প্রদীপ
দু'হাত দিয়ে ঘিরে রাখি,
মনের দুঃখে অশ্রু ঝরিয়ে
সারা অঙ্গে ছিটিয়ে মাখি!

শর্বরীর উদাস স্বপ্ন গুলো
সর্বদা দিলো মোরে ফাঁকি!
মিথ্যে আশা হৃদয়ের মাঝে
জড়িয়ে স্বর্গ সুখে থাকি।

তুমি আমার কবিতার ছন্দ
কলম তূলীর ঝরা কালি,
মুখ ফিরিয়ে চলে গেলে
করে দিয়ে হৃদয়টা খালি!

কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফুটেছে আজি
সৌরভ আসে অনিলে ভেসে,
সবুজ দিগন্তে প্রেয়সী নিয়ে যায়
ওই রঙিন স্বপ্নের দেশে।

হাতে হাত রেখে চলেছি মোরা
বহুদূর বহুপথ হল পাড়ি,
রজনীর শেষে নীরদের পথে
তখন নিশিকান্ত গেল বাড়ি।

নিদ্রা ভঙ্গের পর প্রেয়সী
মোর অন্তর গেল পুড়ে!
মৃত্যুর মত স্বপ্ন গুলো
রয়ে গেল দু'নয়ন জুড়ে!

সুপ্তি ভাঙলেই হৃদয় কাঁপে
বিরহের নিঃশব্দ কান্নার সুরে!
পড়ে আছে শূন্য শয্যা
তুমি চলে গেছো বহুদূরে!

ক্ষণদার মিথ্যে স্বপ্ন গুলো
যেন আঁখির উদকে ভাসে!
সিক্ত হয়ে নগ্ন হয়ে
দ্বিজ ডাকা ভোরে হাসে।


রচনাকালঃ- ২১/০৩/২০১৭

উদারতার প্রতি

কবি রিঙ্কু রায় কে এই কবিতাটি তিনি উৎসর্গ করেছেন।
----------------------------------------------


ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ শহরে
আবির্ভাব হল একটি নতুন মুখ,
ভাই বোনের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে
খুঁজে পেলাম হারানো কিছু সুখ।
আমার প্রিয় সকলের মনের মত
তুমি ভাবনাশিল কবি রিঙ্কু রায়,
সার্থক হয়েছে তোমার জীবন
আমি সেই কথাটা বলে যায়।
তোমার ছবি দেখতে পেলাম
রঙিন ফুলের মাঝে গভীর বনে,
তোমার ছবি আঁকছি বসে
একাকি নিরালায় প্রতিক্ষণে।
পড়েছ তুমি কোরআন বাইবেল
পড়েছ পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গীতা,
কবে শুনব ওই মধুর কন্ঠে
আমার লেখা একটি কবিতা!

দেখেছি তোমার মলিন মুখে
সে কতনা শান্তির ছায়া,
দেখেছি তোমার ওই দুটি নেত্রে
লুকিয়ে থাকা অজস্র মায়া!
লিখেছ তুমি হাজারো কবিতা
সাজিয়েছ অপরূপ ভাবে ছন্দ,
তুলনা হবেনা তোমার কবিতার
যতই বলুক না কেন সকলে মন্দ!
লিখেছ তুমি নাটক উপন্যাস
লিখেছ কতনা সুন্দর গল্প,
পাঠ করলেও শেষ হবেনা
এই জীবনটা যে বড় অল্প!
রাতের আঁধারে লিখছি সাহিত্য
চারিদিকে শুধুই যেন নীরবতা!
কবে শুনব ওই মধুর কন্ঠে
আমার লেখা একটি কবিতা!

ধন্য তুমি ধন্য তোমার জীবন
সফল হয়েছ কবি রিঙ্কু রায়,
তোমার মধ্যে আছে উদারতা
তারার উজ্জলতা দেখতে পাই।
অপরূপ জ্ঞানের মাধুর্য দিয়ে
প্রতিনিয়ত করেছ কবিতা সৃষ্টি,
উনমুক্ত শব্দ হৃদয় স্পর্শ করে
যেন ঝরে পড়ে অন্তরীক্ষের বৃষ্টি।
এভাবেই লেখনীর মধ্য দিয়ে
জ্ঞানের মুক্ত কোরো দান,
আসছে শুভ দিন আগামী লগ্নে
তুমি বাংলার বুকে পাবে সম্মান।
উদয় হবে আগামী দিনে
এক নতুন রূপে সবিতা,
কবে শুনব ওই মধুর কন্ঠে
আমার লেখা একটি কবিতা!

সর্বদা তোমার হাসিখুশি মুখ
ব্যাকুল প্রাণে দেয় দোলা,
শিশুর মত ওই কোমল হৃদয়
বর্ষণ করে শান্তির গোলা।
কবিতার মধ্যে ব্যবহার করেছ
কত সহজ সরল ভাষা,
তার কারণে পেয়েছ তুমি
সারা বাংলার অফুরন্ত ভালোবাসা।
ঈশ্বরের অসীম কৃপার দানে
তুমি পেয়েছ মধুর সুর,
সুরের ছন্দে ঝরে পড়ে
অগণিত মনি মুক্তার নূর।
হারিয়ে যাব চিরতরে একদিন
তাই মনে জাগে শূন্যতা!
কবে শুনব ওই মধুর কন্ঠে
আমার লেখা একটি কবিতা!

তাইতো অনেক তপস্যার ফলে
আজ তুমি হয়েছ আবৃতিকর,
সুমধুর কন্ঠস্বরে মুগ্ধ হয়েছে
বিস্তীর্ণ বাংলার প্রতিটি ঘর।
তোমার কন্ঠের প্রতিটি স্তরে
রবীন্দ্রনাথের কবিতার হার,
তোমার কন্ঠে শিহরণ জাগে
কাজী নজরুলের বিদ্রোহী হুংকার!
তোমার কন্ঠে বেজে ওঠে
জীবনানন্দ দাসের প্রকৃতির রূপ,
তোমার কন্ঠে বিরাজমান আছে
সুকান্তের জমে থাকা বেদনার স্তুপ!
নিরাশার আবরণে ঢেকে গেছি
তাই জীবনে রয়ে গেল অপূর্ণতা!
কবে শুনব ওই মধুর কন্ঠে
আমার লেখা একটি কবিতা!

আমি বীর চির বিদ্রোহী
তাই সাম্যের গান গায়!
আমার গানে সুর দিও
উদার প্রিয় কবি রিঙ্কু রায়।
আমি এক ভাবুক কবি
সর্বদা করি ভাবধারায় বিশ্বাস,
আজীবন শ্রদ্ধা করে যাব
শরীরে চলবে যতদিন নিশ্বাস!
আমি অফুরন্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই
ওগো প্রিয় কবি রিঙ্কু রায়,
তোমার পবিত্র চরণ ধূলিতে
সর্বদা দিও মোরে ঠায়!
ধীরে-ধীরে অসুস্থতার বেড়াজাল
তৈরি করছে ভয়াবহ নিঃসঙ্গতা!
কবে শুনব ওই মধুর কন্ঠে
আমার লেখা একটি কবিতা!


রচনাকালঃ- ১৭/০৩/২০১৭

খ্যাতিমান কবি


কবে হব আমি খ্যাতিমান কবি
স্বপ্নে দেখি শুধু সেই দিনের ছবি,
হব আমি একদিন উচ্চ স্থানের অধিকারী
সবাই করবে শ্রদ্ধা আর অনেক সম্মানের দাবিদারি;
একদিন হবে আমার লেখা প্রথম বই প্রকাশ
শীতল অনিল বইবে সেদিন ঝরাবে বৃষ্টি আকাশ।

কবে হব আমি কবি সুকান্তের মত
মৃত্যুর পর হবে আমার কবিতা বিখ্যাত!
গালে হাত রেখে বসে কবিতা লিখে যাব
কবিতার ছন্দ দিয়ে সবার মন জিতে নেব;
রেখে যাব অবণীতে স্মৃতি হিসেবে কাব্যগ্রন্থ
থাকবে তোলা আমার জন্যে সকলের ভালোবাসা অফুরন্ত।

কবে হব আমি কবি রবীন্দ্রনাথের মত
প্রেমের ছন্দে ভাসিয়ে দেব আছে নর নারী যত,
আমার কবিতায় মুগ্ধ হবে সারা বাংলার মানুষ কত
আমি আছি সেই দিনের অপেক্ষায় রত;
খ্যাতিমান কবি নায়ী বা হলাম তবুও তো আমি কবি
পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব একদিন রয়ে যাবে আমার প্রতিচ্ছবি।

কবে হবো আমি কবি নজরুলের মত
শত দুঃখ জমা আছে মনে বুকে আছে ক্ষত!
প্রতিবাদী মন আমার হব বিদ্রোহী কবি
জাগিয়ে তুলবো মানব সমাজকে হয়ে তাঁর প্রতিচ্ছবি;
অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে যাব কবিতার ছন্দ নিয়ে
জাগবে মানব জাগবে ধরনী নিষ্ঠার স্লোগান দিয়ে।


রচনাকালঃ- ১০/০৩/২০১৭

বিক্ষিপ্ত জলদ


বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে গগনে জলদ
শ্রাবণের বারিধারায় ঝরছে বৃষ্টি,
দিশাহীন মনে জাগলো আবেগ
প্রকৃতির মাঝে করব কিছু সৃষ্টি।

পরিবেশে অনিলের শীতল স্পর্শে
ব্যাকুল মনে জাগলো শিহরণ,
বৃষ্টি ঝরা এই রঙিন মেঘলা দিনে
মানবোনা কোনো বাধা বারণ।

সারাক্ষণ বইছে মাতাল গন্ধবহ
শান্ত তটিনীতে ফেঁপে উঠছে নীর,
খেয়া পারাপারে ব্যস্ত মাঝি ভাই
যেন অপেক্ষায় রত গাঙের দুই তীর।


রচনাকালঃ- ০৬/০৩/২০১৭

শেষ রজনীর বৃষ্টি


তিমির রাতে হাতে মশাল নিয়ে হেঁটে চলেছি
একাকি নির্জন পথে যেখানে কারো দেখা নেই,
গাঢ় অন্ধকারে অম্বরে জ্বলছে কয়েকটি তারা
ঝিঝি পোকার ডাকে বাদুড়েরা করছে কোলাহল।

জানি আজ চিরতরে হারিয়ে যাব ভূ-মণ্ডল ছেড়ে
নয়নে পড়েছে মৃত্যুমুখী মাকড়সার মায়াজাল!
এতদিন আঁকড়ে ধরেছিলাম সকলের ভালোবাসা
জানি আজ চলন্ত নিশ্বাস চিরতরে থেমে যাবে!

তবুও সকলের সামনে করি বেঁচে থাকার অভিনয়
সবুজ মাঠের প্রান্তে শত কষ্টের মধ্যে,
যে কুঁড়ে ঘর তৈরি করেছিলাম আশ্রয়ের জন্য
আজকের পর শূন্য পড়ে থাকবে সেই আলয়!

জ্বলবেনা সন্ধ্যের পর সেখানে কোনো প্রদীপ
সকাল বেলায় তুলশির গাছে পড়বেনা জল,
দেওয়ালে ঝুলে থাকবে আমার বেরঙিন চিত্র
শূন্য পড়ে থাকবে উনমুক্ত সদনের আঙিনা।

ক্ষুধার জ্বালায় উড়ে আসা অগণিত শালিক পাখি
আজকের পর আর পাবেনা কোনো খাবার,
চেয়েছিলাম একদিন সুন্দর গগনকে ছুঁতে
তাই ছুটে গিয়েছিলাম ঐ শেষের সিমান্ত ডিঙিয়ে।

হারানোর বেদনায় হৃদয়ে জমে থাকা বীজ
ছড়িয়ে থাকবে অস্তিত্বের উর্বর ভূবনের মৃত্তিকায়,
ধীরে-ধীরে বুকের মধ্যে বাড়ছে মৃত্যু যন্ত্রণা
তাই বুঝি শুনতে পাচ্ছি এত কান্নার শব্দ!

এতদিন ঘন শিশিরের আবরণের মত
যাদের ভালোবাসা আমায় ঘিরে রাখতো সারাক্ষণ,
জানি আজকের পর ধীরে-ধীরে মুছে যাবে সবকিছু
জানি ভিজতেই হবে শেষ রজনীর বৃষ্টিতে!

তাইতো আমার সঙ্গে কোনো ছাতা রাখিনি
আটকাতে পারবেনা মৃত্যুরূপী বৃষ্টিকে কোন ছাতা!
তাই আজ মন না চাইলেও ভিজতে হবে
জীবনের শেষ মূহুর্তের শেষ ক্ষণের বৃষ্টিতে!

একদিন যে অন্তরীক্ষকে স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম
হয়ত মৃত্যুর পর সেই ইচ্ছেটা পূর্ণ হবে!
নিথর স্তব্ধ হয়ে পড়ে থাকবে প্রাণহীন শরীর
অবশেষে গলে চিরকালের মত লুপ্ত হবে ক্ষিতিতে!


রচনাকালঃ- ০১/০৩/২০১৭

কারাগার - ১

আরাম বিরাম হীন জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করতে
জন্ম নিয়ে এলাম সুন্দর সবুজ ধরণীর বুকে,
সারাজীবন অসহ্য দুঃখ যন্ত্রণা সহ্য করার পর
আমায় জন্ম দিয়ে জননী মরে গেলেন!

শৈশব কাল থেকে কৈশরে পদার্পণ করলাম
পিতা মাতার আদর স্নেহ ছাড়াই হলাম বড়,
দশ বছর বয়সে রেখে মোর পিতা
মৃত্যু বরণ করে তিনিও চিরতরে চলে গেলেন!

আঁখি জলে ভাসিয়ে দিলাম তাকে চিরতরে বিদায়
ঈল্বরের নিষ্ঠুরতা দেখলাম নির্বাক হয়ে!
পিতা মাতা আমায় ছেড়ে হয়ে গেলেন দ্যুলকের তারা
এ-যে কি বেদনা একজন মা হারা সন্তান'ই জানে!

অভাব অনটনে ছিল মোর জীবন কত মগ্ন
প্রত্যহ রাতে ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখে ভেঙ্গে যেত ঘুম!
বিন্দু মাত্র সুখ আমার কপালে ছিল না
অভাবের ঘরে তেমন লেখাপড়া করা হয়নি।

অসহায় হয়ে খাটতে লাগলাম দিন মজুর অন্যের কাছে
কাজের শেষে হাত বাড়িয়ে বলতাম টাকা দিন হুজুর,
কৈশর থেকে পদার্পণ করলাম যখন যৌবনে
বিবাহের স্বাদ জাগল আমার অন্তরের মাঝে।

এভাবে ভাবতে ভাবতে কেটে গেল কিছু দিন
বিবাহ করে আনলাম আমার ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে,
এক বছর পর হল আমার ফুটফুটে পুত্র সন্তান
বুকে জড়িয়ে ধরে খুঁজে পেলাম সুখের সূত্র।


রচনাকালঃ- ২৬/০২/২০১৭

নবরূপে বৈশাখ

এক নতুন প্রভাত উদয়ের সাথে
প্রথম দিন শুরু হল বৈশাখী হাওয়া,
প্রখর গ্রীস্মের অনুভব জাগল মনে
পথে পথিকেরা করে আসা যাওয়া।
পুরোনো বর্ষকে চিরতরে বিদায় জানিয়ে
আজ ঘটল নতুন বর্ষের আগমন,
নতুন রূপে যেন সেজেছে ধরণী
হাসি খুশিতে ভরে গেল মন।
জীবনের সব দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা
চিরতরে মন থেকে মুছে ফেললাম,
নববর্ষের সাথে আসা আনন্দ গুলকে
আবার হৃদয়ের মাঝে আঁকড়ে ধরলাম।
বাংলার ঘরে-ঘরে পালিত হচ্ছে
নতুন বছরের আগমনে মহা উৎসব,
ফুলের মালায় বাড়ি দোকান সেজেছে
শুনি গান বাজনার আসরের কলরব।
তৈরি হয়েছে নানারকম সুস্বাদু খাবার
বাঙালির সেরা সন্দেশ নাড়ু মিষ্টি,
বিভিন্ন রকম খাবারে মন ভরে ওঠে
চেয়ে দেখি যত দূর যাই দৃষ্টি।
আজ নবরূপে সকলে মেতে উঠেছে
পরিধান করেছে নিত্য নতুন পোশাক,
মিলন মেলায় একত্রিত হচ্ছে মানুষ
বুঝলাম এসেছে নবরূপে বৈশাখ।
সারাদিন শীতল সমীর ছুয়ে গেল
আমার উচ্ছ্বাসিত মুক্ত কোমল হৃদয়,
বৈশাখের আগমনে প্রকৃতি নিয়ে এলো
এক ভয়ংকর বিধ্বংসী মহা প্রলয়।
বিকেলে পরিবর্তন হল দিনের প্রতিচ্ছবি
কাল জলদে অন্তরীক্ষ ঢেকে গেল,
শুনতে পেলাম অনিলের সোঁ-সোঁ শব্দ
চক্রের মত প্রলয়কারি পবন পাক খেল।
ভয়ে হৃদয়ে কম্পন অনুভূতি হল
অবশেষে উঠলো কাল বৈশাখীর ঝড়!
বজ্রপাতের আওয়াজে কাঁপলো ধরিত্রীর মাটি
প্রলয়ের কবলে পড়ে বিপদমুখি ঘরবাড়!
বৃষ্টির জোরালো ধাক্কা লাগছে জানালায়
ঝোড়ো পবনের প্রকপে গাছপালা দোলে,
নিমেষে ধ্বংস লিলা চালিয়ে গেল
কত ঘর ভেঙে পড়ল বসুধার কোলে!
সবুজ মাঠের প্রান্তে লক্ষ্য করে দেখি
নষ্ট হয়ে গেল কত জমির ফসল!
প্রকৃতির আঘাতে দুঃখ পেল চাষী ভাই
উপার্জন হল না তাদের আসল অর্থ!
ধূলোতে আচ্ছন্ন হয়ে থাকা অরণ্য
বৃষ্টির নীরে ভিজে করছে স্নান,
নতুন করে ধারণ করছে সবুজ বর্ণ
গন্ধবহে ছড়াচ্ছে কুঞ্জ ফুলের ঘ্রাণ।
ক্ষেতের ভেজা ঘাস দেখে মনে হয়
যতদিন ভুবন নিয়ম ধারায় চলবে,
প্রতিদিন উদিত হবে নতুন সূর্য
প্রতি বছর এভাবে মহা প্রলয় ঘটবে।


রচনাকালঃ- ১৫/০২/২০১৭

কবর

মৃত্যুর পর চির বাসস্থান হবে
ওই নির্জন অন্ধকার কবর!
সেখানে গেলে কি পরিনাম হবে
তার রেখেছ তোমরা কোনো খবর?
দুপাশের দেওয়াল একত্রিত হয়ে
তখন চেপে ধরবে মাটি!
শুনবেনা সেদিন কোন কথা
যদি মানুষ হিসেবে না হও খাঁটি।
নকির মুনকর আসবে কবরে
চাইবে তিনটি প্রশ্নের জবাব,
মুমিন ব্যক্তি হতে না পারলে
উত্তর দেওয়া হবে বড় অভাব।
অবশেষে একজন ফেরেশ্তা আসবে
অবিরত করবে হাতুড়ির প্রহার!
কেয়ামত পর্যন্ত এই শাস্তি চলবে
অনলে পুড়িয়ে করবে ছারখার!
কবরে থাকবে নিরানব্বইটি সাপ
তারা প্রতি মূহুর্তে করবে দংশন!
কালো অগ্নিতে দেহ ঝলসাবে
বিচ্ছুরা করবে রক্ত শোষণ!
ইবলীসের  অনুগামীদের কথায়
কখনো তোমরা দিওনা কান,
এক পলকে কেড়ে নেবে
হৃদয়ে জমে থাকা ইমান।
মৃত্যুর পর সারাজীবনে কৃতকার্যের
দিতে হবে সকলকে হিসাব,
পাপ কর্ম থেকে বিরত না থাকলে
কবরে মিলবে ভয়ংকর আযাব।
এ জীবনে পুণ্যের কাজ করলে
সেখানে পাবে কত শান্তি,
পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ পড়ে
শোধন কর তোমাদের ভুলভ্রান্তি।
কবরের ভয়াভহ শাস্তির কথা
জানলাম কোরআন হাদিস পড়ে,
থর-থর করে মোর হৃদয় কাঁপলো
পায়ের তলার মাটি গেল নড়ে!
বাড়ি গাড়ি ধণ প্রচুর সম্পদ
নিয়ে যতই করনা কেন ভঙ্গি,
মৃত্যুর পর একাই থাকতে হবে
কেউ হবেনা তোমাদের সঙ্গী!
ধরণীর মায়াজালের বাঁধনে পড়ে
তোমরা করছো কেন ভুল?
বিপদের মধ্যে পড়লে কখনো
আল্লাহ ছাড়া নেই কোনো কূল।
আল্লাহ হলেন সৃষ্টি কর্তা
তিনি পরম দয়ালু করুণাময়,
এ জগতে আমি তাঁকে ছাড়া
আর কাউকে করিনা ভয়।
তওবা করে ইমান এনে এসো
মসজিদে যায় নামাজ পড়তে,
কিসের অহঙ্কার কর এ জীবনে
একদিন হবে সকলকে মরতে!
দুহাত তুলে প্রার্থনা করে
মসজিদে সিজদায় হলে রত,
মহান আল্লাহ ক্ষমা করবেন
তোমাদের গুনাহ আছে যত।


রচনাকালঃ- ০৫/০২/২০১৭

ছুটি

কোথায় গেল সব সহপাঠি
আজ আয়রে সকলে আয়,
মহা আনন্দে খেলব মোরা
চল সবুজ মাঠের প্রান্তে যায়।

গাঁয়ের পাঠশালা বন্ধ মোদের
আজ পেলাম সবাই ছুটি,
হারিয়ে যাব প্রকৃতির মাঝে
বন্ধুরা এক সাথে বেঁধে জুটি।

যাব এবার সবুজ প্রান্তে
ওই সর্ষে ফুলের ক্ষেতে,
সেখানে সুন্দর মৌমাছিরা
মধু আহরণে উঠছে মেতে।

নদীর পাড়ে ছিপ দিয়ে
ধরব ভিন্ন প্রজাতির মাছ,
শীতল ছায়ায় আরাম পাব
সেখানে আছে বট গাছ।

উল্লাসে মোরা করব খেলা
পাড়ার সকল সহপাঠি মিলে,
কোকনদ ফুল তুলতে যাব
এই গাঁয়ের মতি ঝিলে।

প্রকৃতির মাঝে যাব দেখতে
রঙবাহারি পুস্পের মেলা,
দয়াল মাঝির পুকুরে গিয়ে
আজ করব সাঁতার খেলা।

আম জাম পেয়ারা কুড়িয়ে
সবাই খাব মজা করে,
সন্ধ্যা হলেই ফিরে আসব
মোরা যে যার ঘরে।


রচনাকালঃ- ৩১/০১/২০১৭

রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭

সাধের কুঁড়েঘর


দুব্বাঘাসে ভরা মাঠ
সোনালী ধানক্ষেতের অপরূপ দৃশ্য,
পাখিদের নরম হাসির আভা
আমের মুকুলের সুগন্ধ,
এই সব নিশানা ধরেই ফিরছি আমি।

রোদ্দুরের খরতাপে হাঁটছি একা,
হটাৎ সন্ধ্যা নেমে এল বনের ধারে
যেন চারিদিক কুয়াশায় আচ্ছন্ন;
আগের স্মৃতিগুলো ক্রমে-ক্রমে মুছে গেছে
মনের কোণে নানান বিচিত্র প্রশ্নের স্তূপ জমে!
আঁধারের স্তব্ধতায় ডাকে ঝিঝি পোকা।

একটুখানি এগিয়ে যেতেই-
হটাৎ দেখি, ঐ যে জ্বলছে প্রদীপের আলো'
ওটাই বুঝি আমার সাধের কুঁড়েঘর।
অনেক দিন আগে আমি তাকে ছেড়ে
কাজের খোঁঁজে শহরে চলে গিয়েছি,
তবু তার আঁচলের ছায়া আজও হৃদয়ে আবদ্ধ;
ঘুমের সময় তার সাথে করেছি কত গল্প;
নিশিথে স্বপ্ন দেখেছি রূপকথার কাহিনীর মত।

সময়ের সাথে বড় হয়ে,
একদিন ঘর ছেড়ে বেরিয়েছি
সন্ধ্যার সীমান্তজোড়া ওই দূরের পাহাড় ডিঙিয়ে।
অবশেষে পৌঁছেছি এক অজানা শহরে!
ঘরে ফিরে আসার তাগিদায়
দিশেহারা হয়েছি মনের মাঝে পথ খুঁজে!
রূপ কথার গল্পের কখনও শেষ দেখেনি"
আজ সেই দুব্বাঘাস পাখিদের কোলাহল
সোনালী ধানক্ষেত গ্রামের ঝিল আর
ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়ে এখানে ফিরেছি।

শূন্য আলয়ে জ্বলছে প্রদীপ!
আলো আর অন্ধকার প্রতিক্ষণে খেলা করে-
আমার বুকের মাঝে,
আজও আমার কানে বেজে ওঠে
ভাঙাচোরা কণ্ঠস্বরে বৃদ্ধা মা'য়ের কথাগুলো,
সে যেন বার-বার ঘরে ফিরতে বলে!
হয়ত প্রদীপ নেভার পরও এই ডাক শুনতে পাব;
যতক্ষণ না আমি রূপকথার গল্পগুলো
মনের কোণে চেপে রেখে আবার গিয়ে দাঁড়াব
আমার সেই দুঃখের দুয়ারে।


রচনাকালঃ- ১৬/০৩/২০১৯

দিন বদলের ডাক


হটাৎ পেলাম নীল জ্যোৎস্নার ইশারা,
আঁধারের মাঝে জ্বলছে ছোট-ছোট মশাল,
আর সূর্যের আলোয় দিন যেন অসহ্য।

নিঃশব্দ সময়ের সেই কঠিন পদক্ষেপ
বুঝিয়ে দিল পৃথিবীর বুকে বিপদের ছায়া,
তাই রণক্ষেত্র থেকে ডাক এল্
বিদ্রোহের ডাক!
কলঙ্কিত সভ্যতা এসে বলে গেল
এবার সময় এসেছে দিন বদলাবার।
নিমেষে নেমে এল আঁধার ধরণীর জমিনে
জনতার প্রবল দুঃখের জোয়ারে,
রাতের স্তব্ধতায় বিচলিত মনের মাঝে;
আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড আঘাত করে গেল!

বসুধার বাতাবরণ হয়েছে দূষিত!
মৃত্তিকা চিৎকার করে বলে গেল,
আমি মুক্তি চাই, চির মুক্তি!
এ-কী সেই মানব?
যাদের বহুকাল পুর্বে নিয়তি রচনা করেছিল;
এ-কী সেই মানব?
যারা প্রেম ভুলে জ্বেলেছে প্রতিহিংসার অনল!

আমার প্রবল প্রতিবাদ,
পাপীদের মনে আঘাত হানে!
দূর্গম পথ চলতে কখনো হইনি ক্লান্ত,
অত্যাচারী শাসকের সম্মুখে হইনি দুর্বল।
জানি, আজীবন করে যেতে হবে বিক্ষোভ
এই নোংরা রাজনীতির বিরুদ্ধে,
দিয়ে গেল নীল জ্যোৎস্না ইশারা
ডেকে গেল রণক্ষেত্রের বিষাক্ত মৃত্তিকা;
দেখি দিনের শেষে মানবের নয়নে মৃত্যুভয়!
যে নোংরা রাজনীতি একদিন বুনেছিল
সাম্প্রদায়ীকতার ঘন জাল,
সে সব মুহূর্ত আজও অস্পষ্ট দিনের শেষে
শত-শত প্রাণ বলির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


রচনাকালঃ- ১৯/০১/২০১৯

আঁধার ভুবন

মানুষ মানুষের করে সংহার!
কেউ আজীবন রবে কী ধরণীতে?
ক্ষমতার দাপটে কাড়ে অধিকার
শোণিতের ক্রীড়ায় ওঠে মেতে।

ভাই ভাইকে করে হত্যা!
প্রতিহিংসার অনল জ্বলে প্রখর,
খুনোখুনি ধর্ষণে অক্ষত সত্তা
পাপ সপ্তম গগনের শিখর!

আঁধার ভুবনে মগ্ন হয়ে
যারা দেয় মিথ্যা অপবাদ,
অপবাদী আনে শান্তি বয়ে
নামধারী ইবলিস লাগায় বিবাদ।

বাক তর্কের নেই স্বাধীনতা
সত্যকে করে সদা আড়াল,
জাতি শংসাপত্রে ব্যস্ত মানবতা
গর্ধব সাজে ডোম চাড়াল।

এখনও বসে ষড়যন্ত্রের মেলা
গলায় পরে বিজয়ের হার,
খেলে নোংরা রাজনীতির খেলা
প্রতারণার ফাঁদে করে প্রহার।

লহুর স্রোতে ভাসে তরী!
পাল তুলে যায় এগিয়ে,
দিশাহীন প্রজা আহা কি করি
শ্মশান কবরে লাশ বিছিয়ে!

দাজ্জালের বদন বিশ্রী কদাকার
চির অভিশপ্ত ইহুদীর মত,
মহামানবের আবির্ভাবে করে চিৎকার!
পাপ আত্মার অন্তর ক্ষত-বিক্ষত।

প্রত্যহ অপকর্মের দেয় ডাক
পাপীদের মুখে ফোটে হাসি,
বিশ্ব বিবেক কেন নির্বাক?
দেশে রাজ করে সন্ত্রাসী।


রচনাকালঃ- ১২/০৫/২০১৯

আহ্বান


এসো বিব্রোহী এসো দেশের মুক্ত বীর,
নিজ হস্তে খণ্ডিত কর ঐ সৈরাচারীদের শির!

উত্তপ্ত জমিনে প্রতিজ্ঞা নিতে
আগামীর সুদিন ফিরিয়ে দিতে,
জাগ্রত হও!
শপথ নাও!

মুছে ফেল নয়ন থেকে দিবা-নিশির ঘুম,
লহরের মতো উঠছে আজ পরিবর্তনের ধুম।

এসো হিন্দু এসো মুসলমান
একসুরে বলি আল্লাহ ভগবান,
সত্ কর্ম!
আসল ধর্ম!

জাগ্রত কর চিত্তের মাঝে লুকিয়ে থাকা চেতনা,
মুছে ফেল মন থেকে অন্ধ বিশ্বাসের যাতনা!

এসো শিশু এসো মহান
ছড়িয়ে দাও মুক্ত জ্ঞান,
মোদের জয়!
হবে নিশ্চয়!

নষ্ট কর ঐ সন্ত্রাসবাদীদের মিথ্যা মহিমা!
বের কর বুকে আছে যত আক্রোশ জমা।

দানবের কোন নেই জাত
গীতা কোরানে করে আঘাত,
নেই মোহ!
উঠুক বিদ্রোহ!

দুই ধর্মে বিভেদ গড়ে করে রাজনীতি,
দেশের বুকে নেমে আসে করুণ পরিস্থিতি।

রক্তে মৃত্তিকা হয় লাল
গদিয়ান বুনে ষড়যন্ত্রের জাল,
উঠাও হাত!
কর কুপোকাত!

দেখুক সবাই ভানুর তেজ রণক্ষেত্রের তলোয়ার!
অভিযান চালিয়ে ঘোঁচাব সমাজের আঁধার।

আজ কারা করে নির্যাতন
যারা দেশ করছে শাসন,
ছিড়ো বাঁধন!
কর শোধন!

আমার মুখের বজ্রবাণী অগ্নি মন্ত্রের মতো!
পাতকীর অন্তর করে দেয় ক্ষত-বিক্ষত।

আমি নই কারো কৃতদাস
আমি করি ভাবধারায় বিশ্বাস,
উঠুক ঝঞ্ঝা!
লড়ব পাঞ্জা!

এসো মহামানব এসো নির্ভীক যোদ্ধার দল,
মোদের গর্জনে কাঁপবে এবার বিশ্বের ভূতল।


রচনাকালঃ- ২০/১০/২০১৬


গভীর রাতে


গভীর রাতে ভেঙ্গে যায় ঘুম,
জলমগ্ন দৃষ্টিতে খুঁজি শুধু তোমাকে!

ভাঙ্গে কত স্বপ্ন ভাঙ্গে কত আশা
তবুও তোমায় খুঁজি ঐ দূর বিষণ্ণ অম্বরে,
জেগে দেখি শুধু তুমি নেই কাছে
নীরবে ফুঁপিয়ে কাঁদে এই মন!

পাখি ডাকেনা কোকিল গায়না গান,
প্রতি বসন্তে দেখি শুধু ঝরে পড়া ফুল।

শূন্যতার আঘাতে কাতর হয় চিত্ত
রাতের অন্ধকারে লুটিয়ে কাঁদে হৃদয়!
চেয়ে দেখ সারা পৃথিবী ঘুমিয়ে গেছে
নিশি কন্যা; এসো মোর কাছে গোপনে।

তোমায় না বলা কত কথা রয়েছে বাকী,
বুকের মাঝে জমেছে অপূর্ণ তৃষ্ণা।

তোমায় দেখার কত আশা নিয়ে জাগে আঁখি
অন্তরে আজ কত অভিমান কত জ্বালা!
প্রণয়ের প্রদীপ নিভেছে বৈশাখী প্রলয়ে
সাজানো রঙ্গিন স্বপ্ন যেন প্রতিবার মরে।


রচনাকালঃ- ০৪/১০/২০১৮

তোমার জন্মদিনে


শুভ জন্মদিনে এসেছি আজ
ওগো আমি তোমার দ্বারে,
নয়ন থেকে মুছো লাজ
বসে থেক না আর ঘরে।

বেরিয়ে এসো উদার মনে
দেখ এনেছি কত উপহার,
বহুদিন প্রতীক্ষার প্রহর গুনে
আজ বসেছে প্রকৃতির সমাহার।

দুচোখ মেলে দেখ চেয়ে
শীতল বারিধারা করছে খেলা,
উত্তাল বাতাসের পরশ পেয়ে
আজ বসেছে ফুলের মেলা।

সোনালী ধানক্ষেতের প্রান্তে এসে
দেখ সবুজের ঢেউ দোলে,
কৃষ্ণচুড়া যেন মুচকি হেসে
তোমায় বসাবে প্রকৃতির কোলে।

নবরূপে উঠেছে আজ মিহির
শোনো কোকিল গায়ছে গান,
ফুলে-ফেপে উঠছে নীর
শুরু হয়েছে নদীর কলতান।

কখন থেকে আছি দাঁড়িয়ে
নিয়ে রক্তভেজা লাল গোলাপ!
ছুটে এসো দুহাত বাড়িয়ে
করবেনা আমার সাথে আলাপ?

এ জীবনে যাব তোমায় ভালবেসে
সওগাত দেব অগণিত সুখ,
সদন থেকে বেরিয়ে এসে
দেখাও একবার সুন্দর হাসিমুখ।


রচনাকালঃ- ০৭/০৯/২০১৮

মন যদি কাঁদে

তোমার মন যদি কাঁদে!
বিচলিত হয় প্রেমের উন্মাদে,
তাহলে চলে এসো তুমি
অপেক্ষায় রত হৃদয়ের মরুভূমি।

তোমার মন যদি কাঁদে!
ফাটল ধরা আবেগের বিষাদে,
এসো শিউলি ফুলের বেশে
আমার রঙিন স্বপ্নের দেশে।

তোমার মন যদি কাঁদে!
অন্তরে ওঠা প্রশ্নের প্রতিবাদে,
চলে এসো বাড়িয়েছি দুহাত
এখনি নামবে আঁধার রাত।

তোমার মন যদি কাঁদে!
পড়ে মায়ার বাঁধনের ফাঁদে,
এসো আমার মুক্ত আকাশে
স্নিগ্ধ পরশ পাবে বাতাসে।

তোমার মন যদি কাঁদে!
ভালবাসার চির শত্রুর বিবাদে,
চলে এসো মাঠের প্রান্তে
যেখানে মিলেছে নভোঃ দিগন্তে।

তোমার মন যদি কাঁদে!
স্পর্শ কোরো ভাসমান কুমুদে,
এসো এই গোধূলি বেলায়
দুজনে ভাসব আনন্দের ভেলায়।

তোমার মন যদি কাঁদে!
বর্ষণ করে আঁখির বারিদে,
যদি মন চায় হারিয়ে যেতে
এসো সর্ষে ফুলের ক্ষেতে।

তোমার মন যদি কাঁদে!
হৃদয় কাঁপানো কোনো বিপদে,
কোকিলের বেশে এসো বৃন্দাবনে
আমায় খুঁজে পাবে প্রতিক্ষণে।

তোমার মন যদি কাঁদে!
বুক ভঙা গভীর খাদে,
তুমি বসুধার বুক চিরে
এসো আমার কাছে ফিরে।


রচনাকালঃ- ০২/০১/২০১৭

বৃষ্টির ধারা


বৃষ্টির ধারা ঝরছে অবিরত
সবুজ বৃক্ষের কদম ফুলে,
সুমধুর গন্ধের পরশ পেয়ে
মনের সকল দুঃখ যাই ভুলে।
বৃষ্টি ঝরে গভীর অরণ্যে
পেখম মেলে ময়ূর নাচে,
শ্রাবণ মাসের বারি ধারায়
পশু পাখি আনন্দে বাঁচে।
সবুজ শস্য ক্ষেতের পাশে
ফেপে উঠছে তটিনীর জল,
শিশুরা গায়ে কাদা মেখে
বৃষ্টিতে ভিজে করছে কোলাহল।
সাতরঙা বিহঙ্গ অন্তরীক্ষে উড়ে
শুনিয়ে যায় সুরেলা গান,
সারি বেঁধে আসে হাঁস
করে পুকুরের উদকে স্নান।
মেতে উঠেছে শীতল অনিল
অম্বুদ করছে যেন কান্না,
গগন থেকে ঝরছে বৃষ্টি
বয়ে যাচ্ছে সারাক্ষণ বন্যা।
বর্ষা ঋতুর অপরূপ সাজে
মনে পড়ে প্রেম প্রীতি,
এক সঙ্গে কাটানো মূহুর্ত
ভেসে ওঠে প্রেয়সীর স্মৃতি।
এত সুন্দর প্রকৃতির মাঝে
সমীরণে দুলছে রমণীর কেশ,
শ্যামল পরিবেশে হয় মগ্ন
উদারতার নেই কোনো শেষ।


রচনাকালঃ- ৩০/১২/২০১৬

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা


শহর নগরের পথে মেতেছে মানুষ রঙের খেলায়
ধীরে-ধীরে অবনীকে গ্রাস করছে প্রতিহিংসার দানব!
এ-তো আসলে রঙ নয় তার বেশে রক্ত
ভুবনের মৃত্তিকা অগ্নিতপ্ত হয়ে ধারণ করছে লালবর্ণ।
রাতের অন্ধকারে শুনতে পাই অসহায় নর-নরীর আর্তনাদ
পিতা-মাতা হারা অভুক্ত শিশুরা শোকে আচ্ছন্ন!
আজ মানব মানবের হয়ে উঠেছে শত্রু
দেখা দিয়েছে নতুন করে বিভেদ আবার।

হারিয়ে ফেলেছে তারা জ্ঞান বোধ ও মনুষ্যত্ব
মন থেকে চিরতরে মুছে ফেলেছে বিবেক,
আজ তাদের পেটে ধরেছে তীব্র ক্ষুধার জ্বালা
পিশাচের তৃষ্ণা নিবারণ হচ্ছে অগণিত মনুষ্যের রক্তে!
গুলি বোমার আঘাতে মানুষ মৃত্যুর কবলে পড়ছে
নির্মম ভাবে তরবারি দিয়ে করছে শিরশ্ছেদ!
কত আলয়কে পুড়িয়ে করে দিল ছারখার
কত ধর্ম স্থানকে ভেঙে করলো ধূলিসাত্।

জঙ্গলের মত অগণিত মৃত দেহের জমছে স্তূপ
চিতা কবর তো দূরের কথা পড়ে থাকছে গোভাগাড়ে,
এ দেশে আবার দেখা দিয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা
হিন্দু মুসলিম ধর্মের আড়ালে হত্যা করছে মানুষ!
তারা ভুলে গেছে নজরুলের শেখানো শান্তির বাণী
পিশাচের দল স্বীকার করে না আল্লাহ ভগবান এক,
রাজনৈতিক দল নিজেদের স্বার্থে লাগিয়ে দিচ্ছে বিবাদ
ধর্ম স্থানে বসে ধর্ম গুরুরা দিচ্ছে কুমন্ত্রণা।

সকলকে বিভ্রান্তে ফেলে দেখাচ্ছে ভুল পথের দিশা
তাদের কারণে সারা দেশে বইছে বিষাক্ত বায়ু,
ধীরে-ধীরে গ্রাস করছে সমাজকে অসুস্থতার বেড়াজাল
ধর্ম বিবাদের অনলে জ্বলে পুড়ে হচ্ছে ছাই।
আসছে আগামীতে দেশের বুকে ভয়াবহ বিধ্বংসী প্রতিচ্ছবি
দেখতে পাচ্ছি মানবের চোখে মৃত্যু ভয়!
বিষাক্ত ভাইরাসের মত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে সন্ত্রাস
দেশের মধ্যে নেই কোথাও শান্তির ছিটেফোটা।

মানুষের রক্তে বিষিয়ে উঠছে দেশের মাটি
অগণিত শিশুর কান্নায় কেঁপে উঠছে আমার হৃদয়!
হে দেশের জন্য আত্ম ত্যাগকারী দেশ প্রেমিক
হে মানুষের স্বার্থে লড়াইকারী বীর সৈনিক।
এই দেশের মাটিতে আজ তোমাদের প্রয়োজন
প্রতিহিংসার দহন নেভাতে আমি করছি আহ্বান,
এসো আমরা সকলের দ্বারে শান্তির বাণী পৌঁছে দিই
ঐ স্বৈরাচারী দানবের হাত থেকে দেশকে করি মুক্ত।


রচনাকালঃ- ২৬/১২/২০১৬

ফিরে এসো শ্রুতি

ঐ যুবকের কাছে তুমি যেয়োনাকো আর
খুলে দাও তোমার বন্ধ মনের দ্বার,
চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর পরশ মাখা রাতে
নীল পরী তুমি থেক আমার সাথে।
ফিরে এসো এই মাঠের সবুজ প্রান্তে
ফিরে এসো শুন্য হৃদয়ে আমার!
দূরে থেকে দূরে আরো দূরে
ঐ খানে গেলে অন্তর বিষাদে খাবে কুরে!
ফিরে এসো শ্রুতি!

যদি তুমি ছেড়ে চলে যাবে মোরে
রেখেছ কেন মায়ার বাঁধনে ধরে?
রঙিন মৃত্তিকার মত তুমি আজ
সেজেছ রূপময় প্রতিমার সাজ।
গোলাপের পাপড়ি মেলে দিলে মুচকি হাসি
বুঝলেনা মনের অকুলতা তোমায় কত ভালবাসি,
তোমার হৃদয়ের মাঝে ফুটেছে ঘাস ফুল
শীতল বাতাসে দুলছে ঘন কালো চুল।
ফিরে এসো শ্রুতি!

আমার ভাঙা মনে নেই কোন কূল
যা ভেবেছি তবে কি সবি ছিল ভুল?
প্রকৃতির তরে বইছে যেন শীতল বাতাস
শ্রাবণের বারিধারায় দেখ আজ মেতেছে আকাশ।
ফিরে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই
তোমার হৃদয়ে দিও মোরে ঠাই,
দেখ ঐ আকাশে উঠেছে একফাঁলি চাঁদ
এসো এ রাতে দুজনে হই প্রেমে উন্মাদ।
ফিরে এসো শ্রুতি!

তোমার হাত ধরে ভিজতে চায় বৃষ্টিতে
চোখে চোখ রেখে দেখব অধীর দৃষ্টিতে,
আমার মনে আজ ধরেছে বড় জ্বালা
পরাতে চায় তোমার গলাই শিউলির মালা।
ফিরে এসো এই গ্রীস্মের খরতাপে
নূপুরের ঝন ঝন শব্দে এ বুক কাঁপে!
ছড়িয়ে দাও প্রেমের পরশ সুমধুর সমীরণে
স্বাগত জানাবে সর্ষের ফুল মোদের মিলনে।
ফিরে এসো শ্রুতি!

প্রেমের বৃন্দাবনে শোনো বাঁশি বাজে
দূরত্ব থাকবেনা কখনো আমাদের মাঝে,
কৃষ্মচুড়ার নিচে থাকব তোমার পথ চেয়ে
আসবে কোকিলের কাছে আমার খবর পেয়ে।
দিওনা দূরে সরিয়ে অবহেলা করে আর
এ আঁখি শুধু তোমায় খোঁজে বার-বার!
শুধু তোমার আশায় দেহে আছে প্রাণ
জানিনা অনন্ত প্রেম কবে করবে প্রদান।
ফিরে এসো শ্রুতি!


রচনাকালঃ- ২১/১২/২০১৬

অত্যাচারী জমিদার- ৪


আজ ধনীর আদর পেয়ে এতই গরব হচ্ছে তার
বিন্দুমাত্র নেই তার মধ্যে সেই আগের কোন চিন্ন,
করুণাময়ী ছিল সে ক্ষুধাহারা শান্তির আবেশ
বহুরূপী সেজে হেসে শান্তিতে কাটাচ্ছে দিন।

তাকে রেখেছিলাম আমি আদরে জত্নে
আহা আজ হয়ে গেছে কত অসহায়!
বেদনায় কাতর হয়ে চারিদিক ঘুরে দেখি
আলয়ের আঙিনায় এখনো আছে সেই পেয়ারা গাছ।

নয়নের জল মুছে বসলাম বৃক্ষের নিচে
তখন আমার যেন শান্ত হল মনের সব ব্যথা,
একে একে মনে পড়ে গেল বাল্য কালের স্মৃতি
নদীর ধার থেকে দেখতাম চাঁদের সোনালী আলো।

ঘুম থেকে উঠে ছুটতাম শস্য ক্ষেতের দিকে
বিকেল হলেই পাঠশালা থেকে ঘরে ফিরতাম,
আর কি ফিরে পাব সেই আগের জীবন?
আমার দূর্ভাগ্যে নিয়তি করছে যেন পরিহাস!

জোরাল বাতাসের ধাক্কায় দুলছে তরূর ডাল
দুটি পাকা পেয়ারা ওপর থেকে পড়ল আমার সম্মুখে,
মনে ভাবলাম বিধাতার দয়া হল আমার ওপর
স্নেহের পরশ পেয়ে আকাশের দিকে চেয়ে রইলাম।

তার পরে কোথা থেকে যেন আসলো পিশাচ
ক্রোধের দৃষ্টিতে ছুটে আসলো আমার কাছে!
কেঁদে বললাম আমার যা ছিল তোমরা কেড়ে নিয়েছ
দুটো পেয়ারা নিয়েছি বলে এতই হচ্ছে রাগ?

কোনো কথা না শুনে আমায় নিয়ে গেল ধরে
সেই বেইমান অত্যাচারী জমিদার বাবুর কাছে,
সব কথা শোনার পর তিনি আমাকে মারতে চায়লেন
জমিদারের থেকে বেশি রাগান্বিত হল তার দলবল।

হাতজোড় করে বললাম দুটো পেয়ারা ভিক্ষা চায়ছি দাতা
বাবু রেগে বললেন তুই-তো বেটা বড় চোর!
দুঃখে হৃদয় ফাটলো এই বুঝি ছিল ভাগ্যে
আপনি হলেন সাধু কিন্তু আজ আমি মহা চোর!


রচনাকালঃ- ১৬/১২/২০১৬

অত্যাচারী জমিদার- ৩

কিছু দিন পর ভিটে মাটি ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম পথে
নিলো আমার সর্বস্ব কেড়ে মিথ্যা দেনার দায়ে,
আজ এ জগতে সবথেকে সে বেশি চায়
আছে যার বেহিসেবি প্রচুর অর্থ আর সম্পদ।

জমিদার কেড়ে নেয় অসহায় গরিবের ধন-সম্পদ
কমবেনা কখনো লোভ লালসা আর মিথ্যাচার!
মনে মনে ভাবি আহা ঈশ্বরের এ কি মহিমা
তাইতো দুঃখের পাহাড় চাপিয়ে দিল বুকের ওপর!

নিস্ব হয়ে ভিখারির বেশে ঘুরলাম কত দেশ
কত দেখলাম বিশ্বের মানবতার করুণ দৃশ্য!
অরণ্য সমুদ্র শহর নগর যেখানে ভ্রমণ করি
স্মৃতির কথা ভুলতে পারিনা সেই ভিটে বাড়ি।

ফুটপাতে থেকে কষ্টের জীবন কাটিয়ে পাঁচ বছর পর
আবার ফিরে আসলাম আমি সেই ছেড়ে যাওয়া গ্রামে,
মাথা নত করে দুহাতে ধূলো তুলে নিয়ে
প্রাণ ভরে দেখি আমার সাধের জন্মভূমি।

গঙ্গা নদীর কূলে শীতল সমীরে গাছপালা দুলে
অফুরন্ত মাঠ দিগন্তের শেষে যেন গগন স্পর্শ করে,
বন জঙ্গলের ছায়ায় আবদ্ধ সুন্দর মোদের গ্রাম
রাখাল বালক ধেনু ছেড়ে খেলা করে শস্য ক্ষেতে।

স্তব্ধ দিঘির জলে নেই কেউ তপ্ত দুপুরে
নদীর পাড়ে গ্রামের বধুরা জল নিয়ে যায়,
বসন্তের কোকিল গাছে বসে গান গাই
বাঁশ বাগানে শোনা যায় শালিক পাখির ডাক।

তৃষ্ণার্ত কাতর হয়ে পৌছালাম নিলয়ের কাছে
জাগলো মনে অভিমান র্নিলজ্জ কুলটা জমির ওপর!
যখন যার হাতে সে থাকে তখন তার হয়
গিরগিটির মত রং বদলায় এইতো নিয়ম তার!

সবুজ আঁচল ভরে দান করতো কত শস্য
আজ কার ভরসায় সে কাটাচ্ছে ভোগবিলাসে!
তার মধ্যে সেই আগের মত নেই শান্তির আবেশ!
আজ সে'ও হয়েছে জমিদারের মত নিষ্ঠুর!


রচনাকালঃ- ১১/১২/২০১৬